শিরোনাম
শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির দায়িত্বে রেজিস্ট্রার

ক্ষোভ-বিক্ষোভ অসন্তোষ

আকতারুজ্জামান

দেশের দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করতে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একজন রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। শিক্ষক নন এমন কর্মকর্তাকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব প্রদান করায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ফুঁসে উঠেছেন। শিক্ষকদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষও বিরাজ করছে। শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদও জানিয়েছেন তারা। তথ্যমতে গত ১৪ আগস্ট থেকে শূন্য রয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের

রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিমকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে উপাচার্যের দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনের আদেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নন এমন রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ার পরপরই সারা দেশের শিক্ষকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ায় শিক্ষকদের ব্যক্ত প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। শিক্ষক ছাড়া অন্য কাউকে এক দিনের জন্যও কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অধ্যাপক রয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। কর্মকর্তাকে কেন উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হলো তা আমার বোধগম্য নয়। অতীতে এমন হয়েছে বলেও আমার জানা নাই। একজন কর্মকর্তা উপাচার্য পদে আসীন হবেন আর শিক্ষকরা তার অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন এটি শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর। তিনি আশা করেন, অতি দ্রুত সেই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে স্থায়ী একজন উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে এ অবমাননাকর পরিস্থিতি থেকে শিক্ষকদের উদ্ধার করা হবে। জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, চুয়েট শিক্ষক সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় ৩০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সংগঠনের প্যাডে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও লিখিত প্রতিবাদ জানাবে বলে জানিয়েছেন সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদে বলা হয়, রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিমকে যে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাতে শিক্ষকরা বিব্রতবোধ করছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রতিবাদলিপিতে বলেছে- রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব প্রদান শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গেই অসঙ্গতিপূর্ণ নয়, একই সঙ্গে তা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের চেতনাবিরুদ্ধ। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির সম্মানও মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এমন দায়িত্ব প্রদান উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিমের নিয়োগাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন ও মর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করেছে- রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কর্মকর্তার পক্ষে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন সম্ভব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের চলতি দায়িত্ব দিয়ে যে আদেশ জারি করা হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী। এর ফলে শিক্ষকসহ জনমনে যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে আমি মনে করি দ্রুত সরকার নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে এ পরিস্থিতির অবসান করবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, রেজিস্ট্রারদের উপাচার্যের সাময়িক যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এটি শিক্ষকরা মানবেন না এটাই স্বাভাবিক। অতীতে কোনো কর্মকর্তাকে এমন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। আমি মনে করি দ্রুত নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ দিলে শিক্ষকদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে তার অবসান হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর