শীতের শুরুতে দেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এ নিয়ে সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেই সচেতনতা। অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। আবার কেউ কেউ তা মানতে নারাজ। তবে সবাই এটা স্বীকার করছেন, বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশে আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। আগামী মাসে কিংবা নতুন বছরের শুরুর দিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বাজারে আসতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঘোষণা দিয়েছেন, টিকা এলে দেশের সবাইকে দেওয়া হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা বা ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত আপাতত মাস্কই হোক ভ্যাকসিন। সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে এখন মাস্ক পরতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি সচেতনতাই জরুরি। এ ছাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। দেশজুড়ে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ মানতে হবে সব স্বাস্থ্যবিধি। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। গত ১ জুন ২০২০ তারিখে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জারি করা এক বিশেষ পরিপত্রে ঘরের বাইরে অবস্থানকালে সবার জন্য মাস্ক পরার নির্দেশ জারি করা হয়। এই নির্দেশনা অনুসারে, ‘বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সব সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এরপর করোনাভাইরাসের বিস্তার কমাতে সরকার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’, অর্থাৎ মাস্ক পরিধান ছাড়া কাউকে কোনো সেবা দেওয়া হবে না বলে নির্দেশনা জারি করেছে। একইসঙ্গে মাস্ক ব্যবহার না করলে জরিমানাও করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু জরিমানা করেই কোনো পরিবর্তন আসবে না। এ নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশেই জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. মুখলেসুজ্জামান হিরো গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহারে সরকার বাধ্য করে তাহলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত মানুষকে মাস্ক পরানোই যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা শুধু ঢাকা বা কিছু পয়েন্টে নয়, সারা দেশেই মাস্ক ব্যবহারের অভিযান চালাতে হবে। প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানাও করা যেতে পারে। তবে মানুষের মধ্যে আর্থিক চাপ বাড়ানো যেন উদ্দেশ্য না হয়। আমি মনে করি, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত মাস্ক ব্যবহারই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কিছু পয়েন্টে অভিযান চললেও খোদ রাজধানীতে এখনো অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক ব্যবহার করেন না অধিকাংশ মানুষ। কেউ কেউ থুতনিতে মাস্ক ব্যবহার করছেন। সড়কে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রিকশা। কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। আদালত পাড়ায় হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী ও তাদের স্বজনদের ভিড়। কারও মুখে নেই মাস্ক। দোকানে দোকানে ভিড় করছেন মানুষ। ঢাকার বাইরের চিত্র আরও বেহাল। এ দিকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। এ সময় পথচারী, ফুটপাথ ও কারওয়ান বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা, রিকশা ও গণপরিবহনের চালক ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহারে সচেতন করা হচ্ছে। অসচ্ছল জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণও করা হচ্ছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ডবিধি এবং সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ প্রয়োগ করে জরিমানাও করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশজুড়েই এই অভিযান আরও জোরদার করতে হবে।