শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঁচ পর্বে দেওয়া হবে করোনার টিকা

বিতরণে তৈরি হচ্ছে ডাটাবেজ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

পাঁচ পর্বে দেওয়া হবে করোনার টিকা

ক্রিসমাসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অনুমোদন ঘিরে রয়েছে জোর আলোচনা। এ টিকা দেশে এলে পাঁচ পর্বে ৫০ ভাগে দেওয়া হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ পর্যায়ক্রমে করোনাভাইরাসের টিকা বিনামূল্যে পাবে। টিকা বিতরণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তৈরি হচ্ছে ডাটাবেজ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রত্যেককে প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, ‘টিকা বিতরণের জন্য মাইক্রো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। টিকা আসার পর শুরুতেই চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। কিন্তু তাদের সবাইকে এক দিনে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী ঝুঁকিপূর্ণ ১০০ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রথমে টিকা পাবেন। এরপর ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে অন্যরা পাবেন। এটিই মাইক্রো পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে শুরু করে সব খাতে বিবেচ্য হবে। রাজধানী থেকে শুরু করে সারা দেশে মাইক্রো পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকা কর্মসূচি চলবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্যসচিবের সভাপতিত্বে টিকাসংক্রান্ত প্রস্তুতি নিয়ে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোন বিভাগ কী কাজ করবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে আইসিটি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখাকে একটি ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। টিকাদানের ক্ষেত্রে নাম নিবন্ধনসহ সব ধরনের তথ্য এ ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকবে। বিশেষ করে টিকাগ্রহীতার বিস্তারিত পরিচয় ও তথ্য এতে পাওয়া যাবে। কারণ একজন ব্যক্তি দুই ডোজ করে টিকা পাবে। সে ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে যাতে ওই ব্যক্তি দ্বিতীয় ডোজ পায় তা নিশ্চিত করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যসূত্র অনুসারে মোট জনগোষ্ঠীর ৩ শতাংশ হিসাবে প্রথমে পাবে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন। দ্বিতীয় দফায় পাবে ৪-৭ শতাংশ হিসাবে ১ কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন। তৃতীয় দফায় ১১-২০ শতাংশ হিসাবে ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন। পরের ধাপে ২১-৪০ শতাংশের মধ্যে পাবে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জন এবং শেষ ভাগে ৪১-৮০ শতাংশের আওতায় পাবে ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জন। ১৯ ক্যাটাগরিতে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা প্রথম ধাপেই টিকা পাচ্ছে। টিকাসংক্রান্ত পরিকল্পনাপত্র অনুসারে দেখা যায়, সবার আগে পাবে সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্স চালক, যার সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৭। পাশাপাশি পাবে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীর সেবায় কাজ করা ৬ লাখ চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্স চালক। এর পরই টিকা পাওয়ার তালিকায় রয়েছে হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে কাজ করা অন্যান্য বিভাগের আরও ১ লাখ ২০ হাজার চিকিৎসক-নার্স ও অন্যরা। ২ লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সরাসরি করোনায় দায়িত্ব পালন করা ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জন, সশস্ত্র বাহিনীর ৩ লাখ ৬০ হাজার সদস্য টিকা পাবেন। বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের ৫ হাজার শীর্ষ কর্মকর্তা টিকা পাবেন। সাংবাদিকদের মধ্যে যারা সরাসরি করোনার খবরাখবর সংগ্রহে কাজ করেন এমন ৫০ হাজার গণমাধ্যমকর্মী টিকা পাবেন। সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত ১ লাখ ৫০ হাজার জন টিকা পাবেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ষাটোর্ধ্ব বয়সের ৫ লাখ ৮৬ হাজার, দাফন ও সৎকার কর্মী ৭৫ হাজার, সরকারি ও স্বায়ত্তশায়িত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অগ্নিনির্বাপক কর্মী ৪ লাখ, বন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মী ১ লাখ ৫০ হাজার জন টিকা পাবেন। বিদেশগামী অদক্ষ শ্রমিক ১ লাখ ২০ হাজার, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৪ লাখ, ব্যাংক কর্মী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১, যক্ষ্মা, এইচআইভি ও ক্যান্সার রোগী ৬ লাখ ২৫ হাজার, অন্যান্য জরুরি সেবায় জড়িত ৭৭ হাজার ৮০৪ জন টিকা পাবেন। এসব ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনের টিকা দেওয়া শেষ হবে।

সর্বশেষ খবর