ভাষা একটি জাতির অন্তর্গত অনুভবের বহিঃপ্রকাশ আর নিজেদের অস্তিত্বের স্মারক। যে জাতির ভাষা নেই কিংবা তা প্রকাশের সুযোগ নেই, তারা অস্তিত্বের সংকটে ভোগে। সেদিক থেকে বাঙালি জাতি সৌভাগ্যের অধিকারী এ-কারণে যে, পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা বাংলা। বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরম্পরা তাদের সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু হাজার বছরের বাংলা ভাষার পথও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বারবার এই ভাষার সুরক্ষার জন্য প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঙালিদের জয়লাভ করতে হয়েছে। এমনকি ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের বিভক্তির মধ্য দিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেয়নি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রনেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে ঢাকার কার্জন হলে এক ভাষণে যখন ‘উর্দু, এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ বলে ঘোষণা দেন, তখন বাঙালি ছাত্রদের মধ্য থেকে যে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, সেই থেকে শুরু হয় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের সংগ্রাম। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা তা কখনো মেনে নেয়নি। বরং ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন চলাকালে কেড়ে নেয় সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার প্রমুখের জীবন। সেই থেকে শুরু হয় ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
একই সঙ্গে সূচনা হয় বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে প্রমাণ করে ‘জ্বলে-পুড়ে খাক, তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনকাল বাদ দিলে ১৯৭৫ সালে তাঁকে হত্যার পর থেকে শুরু হয় ফের বাংলা ভাষাবিরোধী ষড়যন্ত্র। এবার আর বৈদেশিক শক্তি নয়, বাঙালির ভিতরকার মীরজাফর-মোশতাকরা পাকিস্তানি প্রেতাত্মার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বাংলা ভাষা এবং বাঙালি জাতিকে বাংলাদেশি জাতিতে রূপান্তরিত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়। সেই থেকে বাংলা ভাষা ফের সংকটের মুখে পড়ে। এখনো তা থেকে আমাদের মুক্তি মেলেনি। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষা এখন এক উদ্ভট ভাষারূপ পাচ্ছে। ভাষা নিয়ে চলছে যথেচ্ছাচার। বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দির মিশ্রণে ‘বাংলিশ’-এর বদলে আর একটি নামহীন ভাষায় পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলা ভাষা। শহীদদের আত্মত্যাগও ক্রমশ মøান হতে চলেছে। আমাদের বেশকিছু ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় জগাখিচুড়ি ভাষার স্বেচ্ছাচার এখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে এসে বাঙালির প্রাণের ভাষাকে বাঁচাতে হলে রাষ্ট্র এবং সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সোচ্চার হতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। তা না হলে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে ভাষার প্রতি ভালোবাসার নাটক কখনো থামবে না। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কি আমরা তা হতে দিতে পারি? এখনো সময় আছে। সতর্কতা ও সচেতনতা এবং শহীদদের আত্মাকে অবমাননা না করার প্রতিজ্ঞাই কেবল বাংলা ভাষাকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। লেখক : কবি
শিরোনাম
- রাজধানীর বনানীতে গৃহবধূর আত্মহত্যা
- পারিবারিক কলহের জেরে চকবাজারে গৃহবধূর আত্মহত্যা
- ঘি খেতে চাইলে চামচ দিয়ে ভদ্রভাবে খান : ডা. সায়ন্থ
- জবির ১৫ শিক্ষার্থীকে নিয়ে বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবি
- মনোনয়ন না পেয়ে আম্পায়ারের ভঙ্গিতে রিভিউ আবেদন বিএনপি নেতার
- ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরে দেশ ও জাতির মুক্তি হয়েছিল : সেলিমুজ্জামান
- ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষে ভোট দিতে হবে’
- আগামীর বাংলাদেশে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি করতে চাই : মাহদী আমিন
- শ্রীমঙ্গলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত
- নওগাঁয় কর্মীসভা অনুষ্ঠিত
- নির্বাচন ঠেকাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে : আমান
- শহীদ জিয়াই জাতির মহানায়ক: মীর হেলাল
- মনে হচ্ছে নির্বাচন বানচাল করা গণহত্যাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য : প্রিন্স
- ঝালকাঠিতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় র্যাব সদস্যসহ নিহত ২
- ফটিকছড়িতে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ
- ‘এই দেশের জনগণ তারেক রহমানকেই আগামীর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়’
- মাহবুবউল আলম হানিফের শ্যালকসহ গ্রেফতার ৬ জন
- নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হতে হবে : মির্জা ফখরুল
- জাতির মুক্তি হয়েছিল এই ৭ নভেম্বর : রিজভী
- অনলাইনে আর্থিক প্রতারণা নিয়ে পুলিশের সতর্কবার্তা
বাংলা ভাষা কি বিপর্যয়ের পথে?
অসীম সাহা
প্রিন্ট ভার্সন
টপিক
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর