বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

তোমার মরণ না হয় আমার মরণ

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

তোমার মরণ না হয় আমার মরণ

সকাল বেলা যথাসময়ে নিদ্রা ত্যাগ করার জন্য আমি মোবাইল ফোনে অ্যালার্ম দিয়ে রাখি আর অ্যালার্মটি রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে, এক এক দিন এক একটি। গত ২৮ মার্চ টেলিভিশনে টকশোতে অংশ নেওয়ায় ঘুমোতে হয়েছিল অধিক রাতে। সকালের দিকে স্বপ্ন ভেসে উঠল হেফাজত-জামায়াতসহ ধর্ম ব্যবসায়ীদের তান্ডবের দৃশ্যগুলো, যা সন্ধ্যায় টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি। স্বপ্নেই ভেসে এলো বহু প্রশ্ন, যথা ধর্মান্ধ পাকিস্তানিদের এই উন্মাদনা ধ্বংস করার জন্য জন্য কী করা প্রয়োজন। ঠিক তখনই মোবাইলের অ্যালার্মে বেজে উঠল কবিগুরুর শ্যামা নৃত্যনাট্যের গানের একটি কলি, ‘তোমার মরণ, না হয় আমার মরণ, জমের দিব্যি করো যদি এরে হর’। ঘুম ভাঙার পরই ভাবতে শুরু করলাম কেন এই গানটি বেজে উঠল? নিদ্রাবস্থার ঘোর কাটার পর মনে হলো সেদিন পত্রপত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা থেকে যে সমীকরণে আসা যায় তা কিন্তু শ্যামা নৃত্যনাট্যে নগর কোতালের সেই সাবধান বাণীরই মতো। অর্থাৎ আমরা এমন এক চরম সন্ধিক্ষণে পেঁৗঁছেছি যেখানে হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তির জয় হবে, ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জয়ী হবে, নয়তো ধর্ম ব্যবসায়ী পাকিস্তানি চরদের স্বপ্ন পূরণ হবে যারা ১৯৭১-এ পরাজিত হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়া-মোশতাকের নেতৃত্বে আবার উজ্জীবিত হতে পেরেছে।

কদিন ধরে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান সাহেবের গবেষণাধর্মী বই ‘ষড়যন্ত্রের জালে বিপন্ন রাজনীতি’ পড়ে বারবার মনে শঙ্কা জাগছিল, সে বইতে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে পাক-মার্কিন প্রভুদের সঙ্গে মোশতাক, চাষী, ঠাকুর, ওবায়দুর রহমান, মোয়াজ্জেম, জিয়া, ফারুক, রশিদ প্রমুখ পাকিস্তানি চরদের অশুভ আঁতাতের কথা আবেদ খান সাহেব বেশ সাবলীল ভাষায়ই ব্যক্ত করেছেন, যে অশুভ আঁতাত ছিল শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানে রূপান্তরিত করার জন্য যে পরিকল্পনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মোশতাক গং হেনরি কিসিঞ্জারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছিল।

পাকিস্তান-আমেরিকার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারলেই বাংলাদেশের ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে আর তারা ১৯৭১ থেকেই তাদের এই পরিকল্পনা ফলপ্রসূ করতে পারে এমন লোকের খোঁজে সাফল্যের সঙ্গেই লেগে যায়। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই ফ্লাইটে একটি ভুয়া হকি খেলোয়াড়ের দল পাঠিয়েছিল, যার সঙ্গে দবিরউদ্দিন সিদ্দিকী নামে এক বাঙালিও ছিল, যার দাদা ছিল ভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা। পরিকল্পনা ছিল লন্ডন অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ায় তখনকার মতো তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ভুট্টো হাল না ছেড়ে দবির সিদ্দিকীকে নির্দেশ দিল বঙ্গবন্ধু কলকাতা গেলে তখন তাঁকে হত্যা করতে। দবির সিদ্দিকী কলকাতা গমন করলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে। বঙ্গবন্ধুর কথায় ভারতীয় পুলিশ তাকে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে সোপর্দ করলেও আকাশচুম্বী মহানুভবতার অধিকারী বঙ্গবন্ধু দরিবকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। সে জিয়ার সময়ে ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্টও হয়েছিল।

সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর পর শুরু হয় ষড়যন্ত্রের নতুন শাখা। ভুট্টো-কিসিঞ্জার তখন ঠিক করল দেশে খাদ্যাভাব সৃষ্টি করে, যেমনটি কিসিঞ্জার চিলিতে করেছিল, সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করে দিয়ে। তারপর এক মহাসুযোগ ঘটে গেল ভুট্টোর এভাবে যে, বঙ্গবন্ধু লাহোর গিয়ে স্বাভাবিক প্রটোকলের নিয়ম অনুযায়ী ভুট্টোকে নেহায়েত ভদ্রতার খাতিরে অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বাংলাদেশে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করলেন আর ভুট্টোও সেই মহাসুযোগ লুফে বিরাট গোয়েন্দা বাহিনী নিয়ে ১৯৭৪ সালের ২৭ জুন ঢাকা এসে নিজ চোখে এবং গোয়েন্দাদের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার নীলনকশা তৈরি করে পাকিস্তান ফিরে গেলেন। তার সেই নীলনকশায় মোশতাক-জিয়া গং ছাড়াও সেই সফরকালে ভুট্টোর সঙ্গে মোশতাকের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হলে, ভুট্টো মোশতাককে নীলনকশার অনুমোদন দিলেন। বিশেষ সহায়তায় ছিল সে সময়ের এনএসআই প্রধান, পাকিস্তানি চর সফদার এবং খাদ্য সচিব মোমেন খান (বর্তমান বিএনপি নেতা মঈন খানের পিতা) যাকে পুরস্কারস্বরূপ পরে জিয়া মন্ত্রী পদে বসিয়েছিলেন। ভুট্টোর ঢাকা আগমনের চার মাস পরই কিসিঞ্জার এসে সেই নীলনকশায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে বিশেষ করে খাদ্য সচিব মোমেন খানের কারসাজিতে, খাদ্য আমদানির জন্য যে দুই মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল, তারা মার্কিন সরকারের চাপে সে চুক্তি বাতিল করে দেয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা নানা উপায়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্য কিনে সেগুলো নষ্ট করে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। পরেশ সাহা নামে এক প্রখ্যাত সাংবাদিক তার গ্রন্থে লিখেছেন- ‘১৯৭৪-এর ভয়াবহ বন্যার পর আমি বাংলাদেশে যাই। তখন ঢাকার অন্তর্গত সাভার বন্দরের জনৈক ব্যবসায়ী আমাকে জানান কটি বিদেশি সংস্থা চাল সরবরাহ করবেন। তাকে বলা হয়েছিল, ওই সংগৃহীত চাল বাংলাদেশের ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য বিতরণ করা হবে। কিন্তু জানতে পেরেছেন ওই চাল দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি, বাংলাদেশের খাদ্য সংকট আরও শোচনীয় করার জন্য ওই সব চাল সুন্দরবনের নদীগর্ভে ডুবিয় দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, গোপন সূত্র থেকে ওই খবর পাওয়ার পর তিনি বিদেশি সংস্থাকে চাল সরবরাহ বন্ধ করে দেন।’

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য বহুবিধ কর্মকান্ড ষড়যন্ত্রকারীরা গ্রহণ করে। একটি ঘটনা ঘটানো হয় ১৯৭৩ সালে সাভারে এক হিন্দু তামাকের দোকানদার উর্দু কাগজের প্যাকেটে তামাক বিক্রি করলে প্রচার করা হয় সে কোরআন শরিফ ছিঁড়ে তামাকের প্যাকেট বানাচ্ছে। এর ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দেয়। এমনি আরও অপপ্রচারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা হয়। সিরাজ সিকদারদের মতো নকশালপন্থি, শফিউল আলম প্রধানদের এবং মেজর জলিলদের ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করা হয়। তখন ঝানু আমেরিকান গোয়েন্দা ফিলিপ চেরিকে ঢাকায় বদলি করা হয়। একই ধরনের অবস্থা ২০২১-এর ষড়যন্ত্রকারীরা করে বেড়াচ্ছে। দেশে খাদ্যের এত প্রাচুর্য রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এত বেশি রিজার্ভ রয়েছে যে ষড়যন্ত্রকারীরা খাদ্য সংকট তৈরি করতে না পেরে তারা ঠিক একইভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে সেই ধরনেরই পন্থা অবলম্বন করছে যা ১৯৭৩-এ করা হয়েছিল, যার প্রমাণ সুনামগঞ্জ, নাসিরনগর, রামু ইত্যাদির ঘটনা। একইভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে বিভিন্ন জায়গায়, যার বড় প্রমাণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

নিশ্চিত খবরে প্রকাশ হেফাজতের হামলায় ল-ভ- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনপদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বাংলাদেশের বুকে এক টুকরো আফগানিস্তান বানানোর সব আয়োজন ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে হেফাজত। তাদের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ থেকে রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ ভাষা চত্বর, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন, আবদুল কুদ্দুস মাখনের মুক্তমঞ্চ, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার, কালীবাড়ি মন্দিরের প্রতিমা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, জেলা পরিষদ ভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা পুলিশ লাইন, সার্কিট হাউস, ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, ডিসির বাসভবন, এসপির বাসভবন, জেলা জজের বাসভবন, সরাইলের হাইওয়ে থানা, রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, সদর থানাধীন দুই নম্বর পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, জেলা প্রশাসন আয়োজিত উন্নয়ন মেলা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, ব্যাংক এশিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর কার্যালয়, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়, পেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির ওপর হামলা, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি রিয়াজ উদ্দিনের ওপর হামলা, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের কার্যালয় ও বাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও আয়কর উপদেষ্টা জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার কার্যালয়, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম রুবেলের বাড়ি, জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের বাড়ি, বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসিমা মুকাই আলীর শহরের হালদারপাড়ার বাসভবন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলম খোকনের বাড়ি। তার চেয়েও জঘন্য ছিল বাংলাদেশের পতাকায় অগ্নিসংযোগ এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা, যে দুটিই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। অনেকে তলোয়ার হাতে, ঘোড়ায় চরে এসে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল বিনা বাধায়, কেউ দেখার ছিল না, প্রসাশন ছিল নীরব দর্শক। ঐতিহ্যবাহী বহু ঐতিহাসিক স্মৃতি ধ্বংস করে দিল, যেগুলো কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না। প্রসাশনের নাকের ডগায় পোড়ানো হলো জাতীয় পতাকা, ভাঙা হলো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। মনে হচ্ছিল দেশে কোনো সরকার নেই। থানা থেকে মাইকে বলা হলো, ‘আমরা তোমাদের সাথে’।

এ ছাড়াও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও ফাঁড়িতে থাকা ১৮টি মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া সিভিল সার্জন, মৎস্য কর্মকর্তা ও জেলা পরিষদ কার্যালয়ের মধ্যে থাকা প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর ভাঙাচোরা গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 

ধর্ম ব্যবসায়ী এবং পাকিস্তানি তত্ত্বে বিশ্বাসীরা দেশকে আবার পাকিস্তানে রূপান্তরিত করতে পারবে কি না, সাম্প্রদায়িকতা ছড়াতে পারবে কি না, তা নির্ভর করছে আমাদের ওপর। তারা এখনো এত বড় শক্তি হয়ে ওঠেনি যে আমাদের উৎখাত করতে পারবে। বরং তাদের সমূলে উৎখাত করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আমাদের রয়েছে, যা ২০১৩ সালের ৫ মে নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর না হয়ে বরং তাদের তোয়াজ করার নীতি অনুসরণ করি তাহলে যে ফল ভালো হবে না, এদের বর্তমান আস্ফালন তাই প্রমাণ করছে। এ ব্যাপারে ১৪ দলের অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ এবং জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ যা বলেছেন, তার চেয়ে মূল্যবান উক্তি আর হতে পারে না। তাদের কথা পরিষ্কার, এখনই এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে খড়গহস্ত না হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাজনীতি করে আসা অত্যন্ত অভিজ্ঞ রাজনীতিক। ড. আওলাদ হোসেনও একই ধরনের কথা বলেছেন। সেদিন এক টকশোতে প্রাক্তন সচিব, একজন উচিত বক্তা এবং ছাত্ররাজনীতি করা আবু আলম শহিদ খান সরকারের তোয়াজ নীতির সমালোচনায় সেই হিন্দু পুরানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’। শ্রীকৃষ্ণ যে গোকুলে বেড়ে উঠছে, সে কথা রাজা কংশ খেয়ালে না নেওয়ায়, শ্রীকৃষ্ণের হাতেই তার মৃত্যু হয়েছিল। খনাও বলেছিলেন, যে ব্যক্তি দুধ দিয়ে সাপ পোষে, সাপের ছোবলেই তার মৃত্যু হয়। আমরা যদি এ বাস্তবতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হই, তাহলে এদেশ তালেবানি রাষ্ট্র অথবা পাকিস্তানের অংশ হয়ে যাবে। পাকিস্তানের চতুর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমাদের দেশে প্রবেশ করার জন্য উন্মাদ। কী তার উদ্দেশ্য? তিনি সেদিন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানে যাওয়ার নিমন্ত্রণ করেছেন। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানে যান তাহলে রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার অনুযায়ী ইমরান খানকেও ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ করতে হয়। সে সুযোগেরই অপেক্ষায় রয়েছেন ইমরান খান, যাতে সে তার গোয়েন্দা বাহিনী নিয়ে এসে এ সরকার উৎখাত করে তাদের প্রিয়জনদের ক্ষমতায় বসাতে পারে। যেমনটি করেছিল ভুট্টো। যারা বলবেন ১৯৭৪-এর অবস্থা ভিন্ন তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় যে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা ছিল, তার প্রমাণ অবিস্ফোরিত গ্রেনেডেই পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে দুজন পাকিস্তানি নাগরিকের সম্পৃক্ততায়, আদালত যাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। ২০০০ সালের নির্বাচনের জন্য যে তারা বিএনপি-জামায়াতকে অর্থ দিয়েছিল, তা পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রধান পাকিস্তানি আদালতে প্রকাশ্যেই বলেছেন। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দুজন পাকিস্তানি কূটনীতিককে ঢাকা থেকে বহিষ্কার করতে হয়েছিল যখন ধরা পড়ল যে তারা বাংলাদেশি জঙ্গিদের অর্থ দিচ্ছে দেশে শান্তি বিনষ্টের জন্য। ২০১৩ সালে র‌্যাব উত্তরা থেকে যে কজন জঙ্গিকে আটক করেছিল তার মধ্যে একজন ছিল পিআইএর ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তা। আরও মনে রাখতে হবে গত ফেব্রুয়ারি মাসেও আন্তর্জাতিক জঙ্গি অর্থায়ন তদারকি সংস্থা ‘ফাইনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স টাস্কফোর্স (টিআইএফটি) পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাবহির্ভূত না করে তা বজায় রেখেছে, কারণ পাকিস্তান এখনো বিদেশে জঙ্গি রপ্তানি করছে মর্মে তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি ইমরান খানকে নিমন্ত্রণ করেন তাহলে তাকে স্বাগতম জানাতে যে হাজার হাজার হেফাজতি-জামায়াতি-বিএনপি যাবে এটা হলফ করেই বলা যায়, আর তার থেকেই তীক্ষè বুদ্ধির ইমরান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার উৎখাতের কর্মসূচি নেওয়ার প্রেরণা পাবে। মনে রাখতে হবে এরা যেমন বঙ্গবন্ধুকে মানতে পারেনি, একইভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে মানতে পারছে না, ওপরে যাই বলুক না কেন। ভুলে গেলে চলবে না এদেশে ইমরান খানের বহু দোসর রয়েছে, যা ১৯৭১-এ ভুট্টোরও ছিল না।

সূত্র :

১. আবেদ খান রচিত ষড়যন্ত্রের জালে বিপন্ন রাজনীতি

২. বিশিষ্ট সাংবাদিক পরেশ সাহা

৩. মার্কিন সাংবাদিক এমা রথচাইল্ড

৪. লরেন্স লিফশুলজ

৫. দি কারেঞ্জি পেপারস

৬. ক্রিস্টোফার এরিক হিচেঞ্জ রচিত দ্য ট্রায়াল হেনরি কিসিঞ্জার

 

লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর