শিরোনাম
শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বিতর্কিত নিয়োগ নিয়ে রাবিতে তুলকালাম

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা, পুলিশের লাঠিচার্জ

রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের বিতর্কিত এক নিয়োগ নিয়ে উপাচার্য বাসভবনের সামনে হামলা হয়েছে। নিয়োগে বাধা দিতে আসা মহানগরী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা করেন। একসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশও তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাবি উপাচার্য এম আবদুস সোবহান তাঁর মেয়াদের শেষ দিন ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে বিভিন্ন পদে এ নিয়োগ দিয়ে গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নেন তিনি। এর আগে এ নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানানোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালামকে অব্যাহতি দেন উপাচার্য। তাঁর স্থলে একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দিয়ে এ নিয়োগ সম্পন্ন করেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মামুন-উর-রশিদের স্বাক্ষরে নয়জন শিক্ষক, ২৩ জন সেকশন অফিসার, ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ৮৫ জন উচ্চ ও নিম্ন সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নিয়োগকে কেন্দ্র করে এদিন দুপুরে চাকরিপ্রত্যাশী মহানগরী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হামলা চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিয়োগের গুঞ্জনে গতকাল ভোর থেকে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগরী ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী এসে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর চড়াও হয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করেন। পরে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। এ ঘটনায় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান চঞ্চল, হবিবুর হলের সেকশন অফিসার আবদুল্লাহ আল মাসুদসহ আরও অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। দুপুর সোয়া ২টায় পুলিশি নিরাপত্তায় উপাচার্য এম আবদুস সোবহান উপাচার্য ভবন ত্যাগ করেন এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। এর আগে উপাচার্য ভবনের সামনে থেকে উপস্থিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরে উপাচার্য ভবনে চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রবেশ করে নিয়োগপত্র সংগ্রহ করে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য সাবেক রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমাকে নানাভাবে অনৈতিক চাপ প্রদান করা হয়েছিল। তাই আমি দুই দিন ধরে আত্মগোপনে আছি।’ ক্যাম্পাস ত্যাগ করার আগমুহুর্তে রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি ও নিয়োগ প্রসঙ্গে উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বলেন, ‘রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এটা মিথ্যা কথা। অ্যাডহকে নিয়োগের বিষয়টি আপনারা পরে জানতে পারবেন।’ প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হন এম আবদুস সোবহান। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যোগ্যতা শিথিল করে মেয়েজামাইকে নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। গত বছর ইউজিসির তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। তবে শেষ দিন সে নির্দেশ উপেক্ষা করে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে গেলেন উপাচার্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর