শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
হচ্ছে কাস্টমস বিধিমালা

বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি করতে লাগবে ছয় ধরনের তথ্য

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একটি কাস্টমস বিধিমালা করতে যাচ্ছে সরকার, যেটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ এশিয়ায় মুক্ত বাণিজ্য সুবিধাসহ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ হবে। এই বিধিমালা অনুসারে কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্ক সুবিধায় বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি করতে চাইলে, তাকে পণ্যের উৎস্য ও উৎপাদন সম্পর্কে অন্তত ছয় ধরনের সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। রপ্তানিকারকদের পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য এবং পণ্যে ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি তথ্যও দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো ধরনের কড়াকড়ি আরোপ নয়, বরং বহির্বাণিজ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের শুল্কায়ন পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতেই নতুন বিধিটি করা হচ্ছে।

অগ্রাধিকারমূলক বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অধীন কাস্টমস শুল্ক সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত এই বিধিমালাটির একটি খসড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মতামতের জন্য।

এনবিআরের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো বাণিজ্য চুক্তির অধীন অগ্রাধিকারমূলক শুল্কহার দাবির ক্ষেত্রে আমদানিকারককে বিল অব এন্ট্রি বা পণ্য ঘোষণা দাখিলের সময়- আমদানিকৃত পণ্য শুল্ক সুবিধা প্রাপ্তির যোগ্য এবং ট্যারিফ প্রজ্ঞাপন ছাড়াও পণ্যের সার্টিফিকেট অরিজিন, সার্টিফিকেট জারির তারিখ, অরিজিনেটিং ক্রাইটেরিয়া, অ্যাকুমুলেশন বা কিউমুলেশন, তৃতীয় কোন দেশ হতে সার্টিফিকেট অব অরিজিন জারি করা হয়েছে কি-না এবং পণ্য চালানে সরাসরি উৎস্য দেশ হতে রপ্তানি করা হয়েছে কি-না এ সংক্রান্ত ছয় ধরনের তথ্য দিতে হবে। আমদানিকারক সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য চুক্তির অধীন অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কোনো তথ্য গোপন করলে বা অসত্য তথ্য দিলে শুল্ক সুবিধা দাবি বাতিল করার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই বিধিমালাটির খসড়া তৈরি হয়েছে ভারতের কাস্টমস আইনের আদলে। সম্প্রতি ভারতীয় কাস্টমস এ ধরনের একটি বিধি জারি করেছে, যে কারণে সাফটার আওতায় বাংলাদেশসহ কোনো দেশ ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে চাইলে এখন পণ্যের উৎস্য, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য ভারতীয় কাস্টমসের কাছে জমা দিতে হয়। এর আগে শুধু রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে পণ্যের চালানে রুলস অব অরিজিন সংক্রান্ত সার্টিফিকেট দিয়েই পণ্য রপ্তানির সুযোগ ছিল। গত আগস্টে ভারত সরকার কাস্টমস রুলস ২০২০ (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব রুলস অব অরিজিন আন্ডার ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টস) জারি করার পর অবশ্য বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই আইনটির বিষয়ে আপত্তি তুলে বলেছিল যে, সেটি ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। এতে করে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি আরও বাড়বে। জবাবে ভারত বলেছিল, তাদের আইনটি কোনো একটি দেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক বিধি মেনে, সব দেশের পণ্য রপ্তানির বিষয় বিবেচনা করেই সেটি তারা করেছে।

এখন নতুন কাস্টমস বিধিমালা খসড়া তৈরি করে এনবিআর সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, কোনো দেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করতে নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করতেই নতুন কাস্টমস বিধিমালাটি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের সামনে নতুন নতুন বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য (এফটিএ) ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে (পিটিএ) যেতে হবে। ফলে পরিবর্তিত বাণিজ্য ব্যবস্থায় খাপ খাওয়ানোর জন্য আগেভাগেই বাংলাদেশকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এতদিন বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পেয়ে আসছে। সম্প্রতি ভুটানের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। আরও ১১টি দেশের সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বেশ কিছু আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্য (সাফটা, সাপটা, আপটা, ডি-এইট, পিটিএ, টিপিএস, ওআইসি ইত্যাদি) চুক্তির আওতায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চালু রেখেছে। এসব চুক্তির বিষয় পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের কাস্টমস বিধিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতেই নতুন কাস্টমস বিধিমালাটি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস : আন্তর্জাতিক ও বাণিজ্য চুক্তি) আকতার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিন-কে জানান, বিধিমালাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে এখনো মন্তব্য করার মতো কিছু হয়নি। খসড়ার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর এবং ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়ার পর বিধি সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে।

সর্বশেষ খবর