আফগানিস্তান প্রশ্নে মার্কিন ভূমিকায় তোপের মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এমনকি সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এ জন্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। এরই মধ্যে তিনি তালেবানের হাতে মার্কিন-সমর্থক আফগান সরকারের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেনকে পদত্যাগ করতেও বলেছেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, পার্স টুডে।
খবরে বলা হয়, বাইডেন বিশ্ব দরবারে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন মর্যাদা ও শক্তিমত্তার আসনে অধিষ্ঠিত করবেন বলে অঙ্গীকার করলেও আফগানিস্তান প্রশ্নে ন্যক্কারজনক পরাজয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে তালেবানের হাতে আফগান সরকারের পতন বাইডেনের ‘দক্ষ রাজনীতিকের’ ভাবমূর্তিকে গুরুতর প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কাবুল থেকে মার্কিন দূতাবাস কর্মী ও নাগরিকদের সরিয়ে আনার দৃশ্য ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের করুণ পরিণতির কথাই অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতিবিদসহ মার্কিন গণমাধ্যমে বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ধরন তথা এমন প্রস্থানকে লজ্জাজনক বলে মনে করছেন মার্কিনিরা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত রবিবার বাইডেনের পদত্যাগ দাবি করে বলেছেন, নেতৃত্বের জন্য বাইডেন যে অযোগ্য- সেটা এখন প্রমাণ হয়ে গেল। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোও বলছে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে না পারার দায় বাইডেনকে নিতে হবে।
এদিকে কাবুল পতনের আগে-পরের চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বাইডেন প্রশাসনের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তালেবানের কাবুলের দিকে ধেয়ে আসার মুখে হেলিকপ্টার দিয়ে মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার দৃশ্য আমেরিকানদের আহত করেছে। মার্কিন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, যথাযথ পরিকল্পনা না করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথাও সামনে আসছে। মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছিলেন, ৩০ দিনে কাবুল বিচ্ছিন্ন হতে পারে। আর ৯০ দিনে পতন। কিন্তু গোয়েন্দাদের এই মূল্যায়ন পুরোপুরি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এসব কিছুর জন্য এখন দায়ী করা হচ্ছে বাইডেনকে। সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’ এক প্রতিবেদনে বলেছে, মার্কিন আইনপ্রণেতারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও জয়েন্ট চিফ অব স্টাফকে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল সে বিতর্কে না গিয়ে কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, বাইডেন প্রশাসনের হাতে যে পরিকল্পনা ছিল, তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়।এদিকে আফগানিস্তানের আশরাফ গনি সরকারের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব কঠোর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যেমন তুরস্কের ওয়াতান দলের প্রধান দোগু পারিনচাক আফগানিস্তানের ব্যাপারে মার্কিন ব্যর্থ নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, আফগানিস্তানের ঘটনাবলিতে ওয়াশিংটনের প্রতি যে আস্থা রাখা যায় না- সেটাই আবারও প্রমাণিত হলো।