বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দুর্নীতি করলে কোনো ছাড় নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি করলে কোনো ছাড় নয়

কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে কঠোর বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্পষ্টত জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো দফতরে দুর্নীতি হলে সেই মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সচিবকেই।

চার বছর পর গতকাল অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কঠোর বার্তা দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের ব্রিফিং এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সচিবের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে। 

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সচিবরা মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার। সুতরাং ইমোরাল প্র্যাকটিস বা মিসইউজ হলে সংশ্লিষ্ট সচিবকেই দেখতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার যেসব উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া করোনায় বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজধানীর আগারগাঁও পরিকল্পনা বিভাগের সম্মেলনকক্ষে সচিব সভা গতকাল সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বেলা ৩টায় শেষ হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। অসুস্থতায় একজন সচিব বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের পরিচালনায় বৈঠকে ১৩টি বিষয়ে ১৭ জন সচিব বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বশেষ সচিব সভা হয়েছিল ২০১৭ সালের ২ জুলাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সভার মূল ফোকাস ছিল অনিয়ম-দুর্নীতি যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যার যার মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দফতরের দুর্নীতির জন্য সেই মন্ত্রণালয়ের সচিবকেই দায় নিতে হবে। এ জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সচিব সভা শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ সম্পর্কে ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন- প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া দরকার এবং খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, স্কুলগুলোও। কারণ বাচ্চারা ঘরে থাকতে থাকতে তাদেরও যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে। সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। কোভ্যাক্সসহ বিভিন্ন উৎস থেকে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক ২১ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, সভায় স্বাস্থ্যসেবা ও করোনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া সভায় খাদ্য সচিব খাদ্যের অবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। খাদ্য এবং কৃষির সমন্বয় প্রয়োজন। যাতে কোনোভাবেই দেশে খাদ্যের ঘাটতি না হয়। সেটি কৃষি বিভাগ যাতে স্পষ্ট করে দেয়, চাহিদা অনুযায়ী আমাদের উৎপাদন কতটুকু। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে আমদানি করবে। আর উদ্বৃত্ত থাকলে তার প্রয়োজন নেই। সে জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন, এখন থেকে বসে সেটি ঠিক করে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু বোরো ধান উঠে গেছে, গত বছর তিনবার বন্যা হয়েছে, এবার তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এবার খাদ্য এবং কৃষি সচিব দুজন বসে একসঙ্গে কাজ করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, সরকারি ব্যয় কমাতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে বিভিন্ন ঋণের ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। যাতে ছোট মাঝারি সবার বিনিয়োগ ঠিক থাকে। আর সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের কাজ যেন আরও বিস্তৃত করা হয়। যাতে গরিব অসহায় মানুষের সুবিধা হয়। মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি রাখতে হবে। ২০২৬ সালের পর কোটামুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা কমে গেলে কীভাবে চলব সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ শুরু করেছিলাম, করোনাকালে অনেকটা রপ্ত হয়েছে। গ্রামে ডিজিটাল সেন্টারগুলো মানুষের সেবা অনেক সহজ করে দিয়েছে। তথ্য বাতায়ন হালনাগাদ করতে হবে। আমাদের সব কার্যক্রমের সঙ্গে টেকনোলজি সম্পৃক্ত করতে হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমার গ্রাম আমার শহর, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, তারুণ্যের শক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুর কল্যাণ, জেন্ডার সমতা, নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ নির্মূল- এ বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ডেমোক্র্যাটিক সিস্টেমে যখন কোনো রাজনৈতিক দল ইশতেহার দেয় সে অনুযায়ী দেশের উন্নয়ন হয়। তবে কত শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এসডিজির বিষয়েও কথা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার বলেছেন, কোনোভাবে দুর্নীতি টলারেন্স করা হবে না। সব সেক্টরের অসংগতি দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যার যার সেক্টরের বিষয় তারাই দেখবেন। দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সচিবদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কোনোভাবে ব্যর্থ না হয়। আমরা এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। ইতিমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের ভবিষ্যতে আরও অনেক দূর যেতে হবে। সেই পরিকল্পনাও আমরা নিয়েছি। যেমন আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ডেল্টা প্ল্যান- সেগুলো মাথায় রেখেই করা হয়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও যেন এভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সেভাবেই আমাদের কার্যক্রম চালাতে হবে। তারই ভিত্তিটা আমরা তৈরি করেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর