রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মরুভূমিতে ট্রান্স-তাসমান যুদ্ধ

তাসমান সাগর পাড়ের দুই দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে যে সুসম্পর্ক তাকে এক কথায় বলা হয় ‘ট্রান্স-তাসমান’! প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দুই দেশ আজ মরুভূমিতে সম্মুখ যুদ্ধে নামছে। আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। দুই দেশের এই ফাইনালকে এখন বলা হচ্ছে ‘ট্রান্স-তাসমান যুদ্ধ’!

সেমিফাইনালে দুই দেশই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছে ফাইনালের টিকিট। টি-২০র সত্যিকারের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ছক্কা-চারের ফুলঝুরি ছুটিয়ে শেষ চারে নিউজিল্যান্ড হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে, আর অস্ট্রেলিয়া স্বপ্নভঙ্গ করে দিয়েছে এই আসরের সবচেয়ে বেশি সৌরভ ছড়ানো দল পাকিস্তানের। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড দুই দলই এখন চূড়ান্ত মঞ্চে। শেষ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত!

কিন্তু কে জিতবে আজকের ট্রান্স-তাসমান যুদ্ধে? অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড-যে দলই জিতুক না কেন ক্রিকেট বিশ্ব দেখতে পাবে নতুন এক চ্যাম্পিয়নকে। কারণ, দুই দল এখনো টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারেনি। তবে অস্ট্রেলিয়া এর আগে আরও একবার শিরোপার খুব কাছে গিয়েছিল। ২০১০ সালের ফাইনালে তারা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে যায়। আর নিউজিল্যান্ড তো এবারই প্রথম ফাইনালে উঠেছে।

পরিসংখ্যানের আলোকে, অস্ট্রেলিয়াই খানিকটা এগিয়ে থাকবে। ব্লাক ক্যাপসের বিরুদ্ধে তারা এর আগে ৯টি টি-২০ ম্যাচ জিতেছে। আর অসিদের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের জয় ৪টি। তবে কিউইদের একটা সুখের স্মৃতি আছে, টি-২০ বিশ্বকাপের গত আসরে সুপার-১০ এর ম্যাচে ভারতের ধর্মশালা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল। তবে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারেনি। তবে অনিশ্চয়তার টি-২০তে অতীতের ইতিহাস কোনো ভূমিকা রাখে না। এক বলেই যেখানে ম্যাচের ভাগ্য বদলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ সেখানে কোনো ভবিষ্যদ্বাণীও চলে না। তা ছাড়া যেহেতু দুই দলই ক্যারিশমা দেখিয়েই ফাইনালে উঠেছে তাই সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে কাউকে এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে রাখারও উপায় নেই। দুই দলের দুটি স্পেশালিটি আছে -অস্ট্রেলিয়ার যেমন শক্তি, নিউজিল্যান্ডের তেমনি স্কিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই যেন এক একজন ‘পাওয়ার হিটার’, -যা টি-২০ ক্রিকেটে খুবই জরুরি। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। সেমিফাইনালেও দেখিয়েছেন তার ক্যামিও। এই আসরে ৬ ম্যাচে ৪৭ গড়ে করেছেন ২৩৬ রান। আরেক ওপেনার অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চ ছন্দে আছেন। যদিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেমিতে তিনি রানের খাতা খুলতে পারেননি, তবে ফাইনালেই হয়তো দেখাতে পারেন ব্যাটের আসল জাদু। আর স্লগ ওভারে দ্রুত রান তোলার জন্য ম্যাথু ওয়েড, মার্কাস স্টয়নিসরা আছেনই। বোলিংয়ে চমক দেখাচ্ছেন স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। ৬ ম্যাচে তিনি ১২টি উইকেটও শিকার করেছেন। দুবাইয়ের উইকেট থেকেও বেশ সুবিধা পাচ্ছেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের প্রধান ভরসা তাদের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তার কৌশল ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলার জন্য যথেষ্ট। ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ঝড় তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন মার্টিন গাপটিল। সেমিফাইনালে দুর্দান্ত ইনিংসে ড্যারিল মিচেল বুঝিয়ে দিয়েছেন তার গুরুত্ব। দুই ওপেনার এক সঙ্গে জ্বলে উঠলে ম্যাচের রঙ বদলাতে বেশি সময় লাগবে না। এ ছাড়া শেষের দিকে পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য জিমি নিশাম তো আছেনই। সব মিলে কিউইদের পারফেক্ট এক ব্যাটিং ইউনিট। আর এই আসরে নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ যে সবার সেরা তা গ্রুপ পর্বেই দেখা গেছে। ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদির নিয়ন্ত্রিত বোলিং বিপদে ফেলে দিতে পারে অসি ব্যাটসম্যানদের। তবে ফাইনালটি দিবা-রাত্রির হওয়ায় ‘ডিউ-ফ্যাক্টর’ হয়ে যেতে পারে ‘ম্যাচ-ফ্যাক্টর’! রাতে শিশির পড়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দল বাড়তি সুবিধা পায়। দুই সেমিফাইনালেই পরে যারা ব্যাটিং করেছে তারাই জিতেছে। আমিরাতে যেন ‘টস জয়’ মানেই ম্যাচ জয়। তবে ফিঞ্চ কিংবা উইলিয়ামসন-দুই অধিনায়কের কেউ-ই টস নিয়ে চিন্তিত নন। টি-২০ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে দুই দলই নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স প্রদর্শনের জন্য মুখিয়ে। ক্রিকেট বিশ্ব অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে ‘ট্রান্স-তাসমান’ যুদ্ধ দেখার জন্য। সবার দৃষ্টি এখন মরুদ্যানে। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজকের এই ট্রান্স-তাসমান যুদ্ধই যে নির্ধারণ করবে টি-২০ ক্রিকেটের নতুন রাজাকে!

সর্বশেষ খবর