শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভোটের বাকি দুই দিন, সহিংসতা চলছে, আরও এক হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউনিয়ন পরিষদ তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের বাকি আছে আর দুই দিন। তবে নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত, সহিংসতা ও খুনোখুনি চলছে। প্রতিনিয়ত উত্তেজনা বাড়ছে। নির্বাচন প্রচার-প্রচারণা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন প্রার্থীরা। এবারে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বেশি সংঘাত হচ্ছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। আজ এ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামবেন। তৃতীয় ধাপের ভোট নিয়ে গতকালও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এক সমর্থক নিহত হয়েছেন। দুই ধাপের ইউপি ভোটে এ পর্যন্ত ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের দুই দিনের ভোটে প্রাণ গেছে পাঁচজনের। এদিকে গতকাল চতুর্থ ধাপের ইউপি ভোটের মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হয়েছে। অনেক ইউপিতে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সহিংসতায় নিহত একজন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ভিপি মারুফের সমর্থক খাগাতুয়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মিয়া প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয়েছেন।

গতকাল ভোরে খাগাতুয়া গ্রামের মোহাম্মদ মাসুদ তার ভাগ্নিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে             বাড়ি থেকে বের হয়ে খাগাতুয়া ভোরের বাজারে চা খাওয়ার সময় একদল যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মাসুদকে রক্তাক্ত অবস্থায় সিএনজি যোগে উঠিয়ে নিয়ে খাগাতুয়া পশ্চিম পাড়া কবরস্থান সংলগ্ন নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে কুপিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নবীনগর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা নেওয়ার সময় দুপুরে মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। রতনপুর ইউনিয়নে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক।

পুলিশরে যা কমু, পুলিশ তাই করবো : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বললেন, পুলিশরে যা কমু, পুলিশ তাই করবো। সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে এক নির্বাচনী সভায় তিনি এমন বক্তব্য দেন। তার এই বক্তব্যে এলাকায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। ওই প্রার্থীর নাম শহীদ উল্লাহ তালুকদার মুকুল। তিনি কাকরকান্দি ইউনিয়নের দুই মেয়াদের চেয়ারম্যান। ইতিমধ্যেই তার এই বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। হুমকি-ধমকির এসব অভিযোগ উল্লেখ করে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ামুল কাউছার নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও ও একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিয়ামুল কাউছারের লিখিত অভিযোগে দেখা যায়, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহীদ উল্লাহ তালুকদার বলেন, এইবার সুযোগ আমারও আইছে। আমিও দেহামু। বাংলাদেশে একটা এসপি থাকলে আর লাগে না, সব এসপি আমার। এই ওসির আমার কথায় চলতে হবে। তিনি বলেন, ওসির সঙ্গে কথা হয়েছে। যা করা লাগে পুলিশ করবে। তিনি আরও বলেন, এসপি আমার বাড়িতে আইছিল, আমার মায়ের পায়ে ধইরা সালাম করছে। আমার ছোট বইন এসপি। এই এসপির বেইসমেইট। তার সঙ্গে ফোনে কথা হইছে। তিনি বলেছেন, বড় ভাই যা করার আমার পুলিশই করবে। শহীদ উল্লাহ বেশ জোর দিয়েই বলেন, যা কমু, পুলিশ তাই করবো। পিটনার ওসুল তুইল্যা দিমু এইবার। এ ব্যাপারে শহীদুল্লাহ তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ প্রার্থী আগে বলেছে, সে পুলিশ প্রশাসনকে কিনে ফেলেছে। সে বক্তবের জবাবে আমি এমনটা বলেছিলাম। পরে অবশ্য এসপির কাছে আবেদন করে সরি বলেছি। তবে হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা জামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকালে বস্তল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগোলির ও গাড়ী ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এ সময় পুলিশ পারভেজ (২৩) নামে এক ব্যক্তিকে পিস্তলসহ আটক করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাতক্ষীরার তৃতীয় ধাপের ২৮ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র্র করে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় নৌকার নির্বাচনী অফিসে দুুবর্ৃৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করেছে। তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত মোটরসাইকেল প্রতীকের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আমিনুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত কর্মী-সমর্থকদের দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাহাবুদ্দিন মিঞার দুটি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। আগামী ২৮ নভেম্বর ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে ঘারুয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনসুর আহম্মেদের (আনারস প্রতীক) সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানায় একটি মামলা হয়েছে। নোয়াখালীর সেনবাগ পুুলিশ উপজেলার বীজবাগ ইউনিয়নের বীজবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ভোট কেন্দ্রের পাশে ঝোপ থেকে চার বস্তায় রাখা ৯০টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। বগুড়া সদরের নুনগোলা ইউনিয়নে আবারও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঢাকা বিভাগের কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. খলিলুর রহমান বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি নির্বাচিত সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা ইশতেহার থাকে। বর্তমান সরকারেরও একটি নির্বাচনী ইশতেহার রয়েছে। সে আঙ্গিকে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করার আদেশ স্থগিত করেছে আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার আদালত এ আদেশ দেওয়া হয়। নির্বাচন স্থগিতের আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, উচ্চ আদালতের এ আদেশের ফলে এখন আউশকান্দি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণে আর কোনো বাধা নেই। এ ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বরই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট ছয় সপ্তাহের জন্য নির্বাচন স্থগিতের আদেশ স্থগিত করেছেন।

বেড়া পৌরসভায় বিরোধ : পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণার শেষ মুহূর্তে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পাবনা ১ আসনের এমপি শামসুল হক টুকু পরিবারের বিরোধ সংঘাতে রূপ নিয়েছে। পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝেই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এমপি টুকুর ছোট ভাই আবদুল বাতেনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুরে বেড়া সিএন্ডবি বাজার এলাকার এ ঘটনায় আবদুল বাতেনসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হামলার জন্য সংসদ সদস্যের পুত্র ও নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জনের সমর্থকদের দায়ী করেছেন বাতেন। ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও আবদুল বাতেন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন। নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবদুল বাতেন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে জনসমর্থন না পেয়ে পাবনা-১ আসনের এমপি শামসুল হক টুকু তার নিজ পুত্র রঞ্জনকে বিজয়ী করতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। নির্বাচন থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে প্রচারণায় বাধা দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক বার আমাকে হত্যাচেষ্টা হয়েছে। এমনকি আমার বাড়ির সামনে রঞ্জনের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র মহড়া দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে। বেড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার জানান, নৌকা ও নারিকেল গাছ প্রতীকের সমর্থকরা সিএন্ডবি বাজারে মুখোমুখি হলে সামান্য একটু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর