শিরোনাম
শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জামালপুর লক্ষ্মীপুর বেনাপোল হানাদার মুক্ত হয় আজ

জামালপুর, লক্ষ্মীপুর ও বেনাপোল প্রতিনিধি

জামালপুর লক্ষ্মীপুর  বেনাপোল হানাদার মুক্ত হয় আজ

আজ ৪ ডিসেম্বর জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর, লক্ষ্মীপুর, বেনাপোল মুক্ত দিবস। ডিসেম্বরের এ দিনগুলোয় পিছু হটতে থাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয় একের পর এক এলাকা। ১৯৭১ সালের এ দিনে মুক্ত হয় কামালপুর।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ঘেঁষা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুরে যুদ্ধের শুরুতেই হানাদার বাহিনী গড়ে তোলে শক্তিশালী ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ’৭১-এর এদিন হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শত্রুমুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর। ধানুয়া কামালপুর মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে সূচিত হয় শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, উত্তর-মধ্য অঞ্চলের জেলাগুলোসহ ঢাকা বিজয়ের পথ। ১১ নম্বর সেক্টরের ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ সেক্টরের সদর দফতর ছিল ধানুয়া কামালপুর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ থানায়। আর সীমান্তঘেঁষা এপারেই ধানুয়া কামালপুরে ছিল হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি। রণকৌশলের দিক থেকে তাই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ধানুয়া কামালপুর ঘাঁটি দখল করা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কামালপুর বিজয়ের লক্ষ্যে ১১ নভেম্বর পাক সেনাদের শক্তিশালী ঘাঁটিতে আক্রমণ শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এ ঘাঁটির হানাদাররা। ২৩ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হানাদার বাহিনীর গ্যারিসন অফিসার আহসান মালিকের নেতৃত্বে ১৬২ জন সৈন্যের একটি দল যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। শত্রুমুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর। দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ দুপুরে কামালপুর মুক্ত দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

এদিন হানাদারমুক্ত হয়েছিল লক্ষ্মীপুর। ১৯৭১ সালের এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। শত্রুমুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর জেলা। লক্ষ্মীপুর সদরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহবুবুল আলম ও আবুল বাশার বশিরের তথ্যমতে ’৭১-এ লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে ১৭টি সম্মুখযুদ্ধ ও ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চলে। এসব যুদ্ধে ৩৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। দিবসটি নানা আয়োজনে পালন করছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠন।

১৯৭১ সালের এদিন মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে বেনাপোল ছেড়ে পিছু হটতে থাকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা। আশ্রয় নেয় শার্শার আমড়াখালী সদরে। ৫ ডিসেম্বর আঞ্চলিক সদর দফতর নাভারণে আশ্রয় নেয় তারা।

পাক সেনাদের পিছু হটার খবরে বেনাপোলের ওপারে ভারতের বনগাঁর জয়ন্তীপুর থেকে সোজা রঘুনাথপুরের পাশের গ্রাম মানিকিয়ায় ছুটে আসেন মিত্রবাহিনীর ক্যাপ্টেন রায়সহ দুই দেশের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ দুপুরের দিকে নারানপুর গ্রামে অবস্থিত সদর দফতরে হামলা চালালে প্রতি উত্তরে পাক বাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। এ খবর চলে যায় ২ কিলোমিটার দূরে তিন প্লাটুন সৈন্য নিয়ে মানিকিয়া গ্রামে অবস্থানরত মিত্রবাহিনীর কমান্ডার রায়ের কাছে। বেনাপোলের ওপারে জয়ন্তীপুরে তখন ৫ নম্বর সেক্টরের সাব কমান্ডারের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম। সেদিন তাঁর নির্দেশে শুরু হয় প্রবল প্রতিরোধযুদ্ধ। প্রচ- গোলাগুলির খবরে ভীতসন্ত্রস্ত পাক বাহিনী পুটখালী, শিকড়ি বটতলা, বেনাপোল কাস্টমস হাউস এলাকা ছেড়ে রাতের আঁধারে পিছু হটে আশ্রয় নেয় যশোর-বেনাপোল সড়কের আমড়াখালী কোম্পানি সদর দফতরে। এভাবেই শত্রুমুক্ত হয় বেনাপোল। সংঘবদ্ধ মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় দ্বিগুণ সাহস নিয়ে চলতে থাকে একের পর এক অপারেশন। পরদিন শার্শা, নাভারণ, ঝিকরগাছা দখলমুক্ত হয়। এদিন পাকসেনারা ঝিকরগাছা ছেড়ে আশ্রয় নেয় খুলনার শিরোমণি ক্যাম্পে। এভাবেই ৪ ডিসেম্বর বেনাপোল ও ৫ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা দখলদার পাক বাহিনী থেকে স্বাধীন হওয়ার গল্প শোনাচ্ছিলেন স্থানীয় দুর্গাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাহাদুরপুর ইউনিট কমান্ডার দীন মোহাম্মদ ওরফে দীনো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর