শনিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

জামায়াত কার্যালয়ে আগাছা কার্যক্রম বাসায় বাসায়

স্বতন্ত্র না অন্য দলের ব্যানারে ভোট- এ নিয়ে দুশ্চিন্তা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধের বিচার, দলের নিবন্ধন বাতিলসহ নানা ইস্যুতে দলটি দৃশ্যত বিপর্যস্ত। নাশকতার অভিযোগে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরী কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় কার্যালয়গুলোতে জমেছে আগাছা। দলটির কার্যক্রম চলছে বাসায় বাসায়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াত স্বতন্ত্র না অন্য কোনো দলের ব্যানারে ভোটে অংশ নেবে এ নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তায়। দলের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই তারা স্বতন্ত্রভাবে ভোট করছে।

জানা যায়, সরকারবিরোধী ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াত। কিন্তু প্রকাশ্য রাজনীতি কিংবা কর্মসূচিতে অনেকটাই অনুপস্থিত। এখন তারা ভার্চুয়ালি দলীয় কর্মসূচি চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নেতারা। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত দল হিসেবে তাদের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদের দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। সংগঠনটি জোটগত এবং স্বতন্ত্র দুভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তবে জামায়াতের নেতারা অন্য কোনো নিবন্ধিত দলের প্রতীকে বা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে পারবেন। এতে আইনে কোনো বাধা নেই। ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন জামায়াতের মনোনীত নেতারা। নেতা-কর্মীরা বলছেন, জামায়াত ২০-দলীয় জোটে থাকলেও একাদশ নির্বাচনের আগের মতো সব হিসাব-নিকাশ এখন আর ঠিক নেই। জামায়াতের সঙ্গে জোটের প্রধান শরিক বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জামায়াতের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, জামায়াত সব সময় নির্বাচনমুখী দল। তাই আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, আমরা ২০-দলীয় জোটে রয়েছি। আশা করি গত নির্বাচনের মতো এবারও ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করতে পারব। যদি জোটগত না হয় আমরা তখন স্বতন্ত্র বা অন্য উপায়ে নির্বাচন করব- এমন পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে এক যুগেরও বেশি সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও মহানগর কার্যালয়  বন্ধ। এর মধ্যে একটিতে আগাছা জমে আছে। বর্তমানে জামায়াতের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অস্থায়ীভাবে। নেতাদের অনুসারীর বাসা কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্মকান্ড চালাচ্ছে দলটি। সম্প্রতি বড় মগবাজারের এলিফ্যান্ট রোডে ৫০৫ ভবনের নিচতলায় অবস্থান করেন কয়েকজন পাহারাদার। শুয়ে-বসে এখানে পালাক্রমে ডিউটি করেন ছয়জন নিরাপত্তাকর্মী। একজন জানান, ভবনটির মূল মালিকানা জামায়াতের দারুল ইসলাম ট্রাস্টের। ২০১১ সালে বন্ধের পর থেকে দলের কোনো নেতা অফিসে আসেননি। তবে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তল্লাশি করেছে। পল্টনে জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ভিতর থেকে বন্ধ রাখা ফটকে দফায় দফায় টোকা দেওয়া হলেও কেউ সাড়া দেয়নি। প্রবেশপথে লতিয়ে ওঠা আগাছা চোখে পড়ার মতো। ফটকের সামনে জমে আছে পানি। অফিসটি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তালাবদ্ধ। এরপর আর এখানে দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। জানা গেছে, কোণঠাসা হয়ে পড়া দলটি এখন প্রকাশ্যে মিছিল সমাবেশ করার পরিবর্তে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদ এবং ঘরোয়া বৈঠক করে দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করছেন। গত কয়েক মাস ধরে তারা নতুন কৌশলে সাথী ও সমর্থকদের দিয়ে সংগঠন গোছানোর কাছ করছেন। দলের এক নির্বাহী পরিষদ সদস্য বলেন, ১৩ বছর ধরে জামায়াতের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সরকার। ১১ বছর ধরে কোথাও দলীয় কার্যালয় খুলতে দিচ্ছে না। ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, দলীয় কার্যালয় বন্ধ থাকায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিছু অফিস দায়িত্বশীল নেতাদের বাসাকেন্দ্রিক। এ ছাড়া বাইরে রেস্তোরাঁয় দলীয় বৈঠক হয়ে থাকে। তবে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে অনলাইন মাধ্যমেই আমাদের কাজ বেশি হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর