বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
সম্মেলনের প্রথম দিন

রাজনীতিবিদ-আমলা দ্বন্দ্বের অভিযোগ নাকচ

কমিটি ছাড়াই উন্নয়ন প্রকল্প তদারকি করবেন ডিসিরা

উবায়দুল্লাহ বাদল

স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বন্দ্বের খবর মাঝেমধ্যে এলেও বাস্তবে তা নেই বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অথচ এক দিন আগেও জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ময়মনসিংহ-৩ আসনের সরকারদলীয় প্রবীণ সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দেশ আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। তারা এমপিদের শুধু স্যারটাই বলেন। এমপির মূল্য নেই তাদের কাছে। সচিবের কাছে গেলে একজন এমপির কোনো মূল্যায়ন নেই। সংসদ সদস্যদের বলব, দয়া করে আমলাতন্ত্র থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আপনারা শক্ত হন। শক্ত না হলে তারা আমাদের গুরুত্ব দেবে না।’ সংসদের ১৬তম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বরিশালের মেয়র-প্রশাসন দ্বন্দ্ব এবং ফরিদপুরের এমপি-ইউএনও দ্বন্দ্ব দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের ওই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশটা পরিচালিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। রাজনীতিতে নীতি তৈরি করা, আইন তৈরি করা, জনগণের দাবি আদায় করা, প্রশাসনিক কর্মকতাদের অধিকার আদায় করা, সবার জন্যই রাজনীতি প্রয়োজন। রাজনীতির সঙ্গে (প্রশাসনের) কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগতভাবে সমস্যা তৈরি হলে এটাকে অবশ্যই রাষ্ট্র ‘হ্যান্ডেল’ করবে। এই ‘কমিটমেন্ট’ রাষ্ট্রের আছে এবং আমরাও অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ সম্মেলন শুরু হলেও আগে হতো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন, ডিসিদের পক্ষে বক্তব্য দেন চাঁদপুরের প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ও রংপুরের মো. আসিব আহসান। জানা গেছে, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের প্রায় প্রতিটি স্তরে এ দ্বন্দ্বের কথা প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসিদের প্রতি ২৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা  পরিচালনা করতে হবে। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বরাবরই বলে আসছেন, রাজনীতিকরা তাদের ওপর প্রভাব খাটাতে চান।

ইউএনওর সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সব জায়গায় একই রকম সমস্যা হয় এটা বলা যাবে না। অনেক জায়গায় ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান একসঙ্গে অনেক ভালোভাবে কাজ করছেন। আবার কোথাও সমস্যা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে যেখানে যেখানে জটিলতা আছে, সেখানে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল। আর আমি নিজেও এটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে। এখানে কোনো বিতর্ক করার সুযোগ নেই। জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবীরা, সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে ডিসিদের অত্যন্ত আন্তরিক বলে পরিলক্ষিত হয়েছে।’ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় ও সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও জোর দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেন, কথায় এসেছে তাদের কিছু ‘এমপ্লয়ি’ লাগবে। ইউনিয়ন পরিষদে আরও লোকবল লাগবে, এটি করতে গেলে তাদের আয় বাড়াতে হবে।

কমিটি ছাড়াই তদারকি করবেন ডিসিরা : স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে ডিসিদের পক্ষ থেকে কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হলেও তাতে সায় দেয়নি সরকার। কমিটি ছাড়াই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তদারকি চালিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ডিসিরা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন কমিটি করা হয় সে প্রস্তাব করেছিল। আমরা বলেছি, কমিটি করার প্রয়োজন নেই। ডিসিদের এলাকায় কাজ দেখার অধিকার আছে। সে অনুযায়ী আপনারা কাজ করবেন। আর কিছু প্রয়োজন হলে আমরা তো আছি। আমিও ডিসি ছিলাম। কমিটি করার প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট দায়িত্ব ও ক্ষমতা ডিসিদের হাতে আছে। এটাকে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সেজন্য ব্রিটিশ ধারণার যে ইনস্পেকশন, সেটার প্রয়োজন নেই। তারা দেখতে যাবে, ওভার সি করবে, সেটা আরও বেশি করে করার জন্য ডিসি সাহেবদের অনুরোধ করেছি। বিদ্যমান আইনেই ডিসিদের উন্নয়ন প্রকল্প দেখভালের দায়িত্ব আছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। ভূমি অধিগ্রহণে ডিসিদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা আইনগতভাবেই প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক দেরি হয়, তার বড় কারণ ভূমি অধিগ্রহণ। কিছু আইনগত ব্যাপারও আছে। এটাকে আরও দ্রুত করতে তাদের সহায়তা চেয়েছি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর আগের একটি আদেশ অনুযায়ী, বিভাগীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ বা আইএমইডির কার্যালয় চালুর সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।

কালুরঘাটে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ স্মৃতিস্তম্ভ হবে : চট্টগ্রামের কালুরঘাটে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে বলে ডিসিদের জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ডিসি সম্মেলনের নিজ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, সম্মেলনে আমাদের মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাব ছিল। একটি হলো- চট্টগ্রামের কালুরঘাটে মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ স্মৃতিস্তম্ভ করা। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। সেজন্য সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। তাদের বলেছি, কোথাও জায়গা পাওয়া গেলে বা দিলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। মন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে দুটি প্রস্তাব রেখে আসছি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- ভূমির সাব- রেজিস্ট্রি অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন আছে। সেটার এলোকেশন অব বিজনেস পরিবর্তন করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন আনলে ভালো হয়। কারণ সাব-রেজিস্ট্রির কার্যক্রম ভূমি অফিসের রিলেটেড। যদি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসে তাহলে কাজে গতি আসবে। অপর প্রস্তাবটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে। সেটা হলো- যেসব জিনিসপত্র কিনি তার জন্য ভ্যাট দিতে হয়। সেটা দোকানদার রাখে। কিন্তু দোকানদার সেটা ঠিকমতো দেয় কি না আমার সন্দেহ হয়। আর জেলা-উপজেলায় দোকান থেকে পণ্য নিলে হাতে লেখা রশিদ দেওয়া হয়। এতে রাজস্ব আদায়ে সমস্যা হয়। এজন্য সব দোকানে ইএফটি মেশিন সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছি।

এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নয় : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলেও এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা ভাবা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ডিসি সম্মেলনে নিজ মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা ভাবছি না। এমন হারে ছড়িয়ে পড়ছে, এটা তো সব জায়গায়। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থাকলেও তো সংক্রমিত হবে। এখন পর্যন্ত ঠিক আছে, আমরা কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আগেও বসেছি। হয়তো আগামী দুই-একদিনের মধ্যে আবার বসব।

সর্বশেষ খবর