শুক্রবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষকদের প্রস্তাবে শিক্ষার্থীদের না

শাবিতে আমরণ অনশনে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও শাবি প্রতিনিধি

শিক্ষকদের প্রস্তাবে শিক্ষার্থীদের না

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি। শিক্ষক সমিতির নেতাসহ অন্য শিক্ষকরা বারবার চেষ্টা করছেন, আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছেন কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনড়। তাদের একটাই দাবি, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে। এ দাবিতে আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেউ কেউ ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে শাবি উপাচার্যকে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে। শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সপ্তম দিন ছিল গতকাল। বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টকে অপসারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পরে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। একই সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগও চাইছেন শিক্ষার্থীরা। তবে উপাচার্যের পদত্যাগকেই মুখ্য হিসেবে সামনে রাখছেন তারা। এ দাবিতে বুধবার বেলা ৩টা থেকে আমরণ অনশন করছেন ২৪ শিক্ষার্থী। রাতে কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে অবস্থান সরাননি। টানা অনশনে এসব শিক্ষার্থীর কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা অবধি অনশনকারী ছয়জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চারজন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, একজন মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে, একজন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতালে ভর্তি হলেও তারা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ১১ জনকে আন্দোলনস্থলেই স্যালাইন দেওয়া হয়। এ ছাড়া উপাচার্য বাসভবনের সামনে অনশনরত সাতজনকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। আরেক অনশনকারী শিক্ষার্থীর বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি বাড়ি চলে গেছেন। অনশনরতদের সাহস ও সমর্থন জোগাচ্ছেন অন্য শিক্ষার্থীরা। এদিকে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে শাবির চিকিৎসা কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. মাসরাবা সুলতানার নেতৃত্বে একটি টিম প্রস্তুত রয়েছে। তবে শুরুতে তাদের চিকিৎসা গ্রহণ করেননি শিক্ষার্থীরা। এর বদলে তারা স্থানীয় একটি হাসপাতালের চিকিৎসক বাবলু হোসেনকে ক্যাম্পাসে ডেকে এনে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া গতকাল বিকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিমও শাবিতে যায়।

শিক্ষকদের প্রস্তাবে শিক্ষার্থীদেরনা : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে দফায় দফায় চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা। তাঁরা বারবার শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটে গেলেও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থীরা অনশন শুরুর পর বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শতাধিক শিক্ষক কথা বলতে যান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁদের কোনো কথাই শুনতে রাজি হননি। তারা আগে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সমর্থন দেওয়ার দাবি জানান। এরপর গতকাল বেলা ১২টায় শাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক আলোচনার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের। কিন্তু সাড়া মেলেনি তাদের। পরে ড. আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। যে বা যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকবে, আমরা তাকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করব।’ বেলা ২টায় ফের শিক্ষকরা কথা বলতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

বিএনপির একাত্মতা : শাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সিলেট মহানগর বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যার পর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীর নেতৃত্বে সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী, যুগ্ম-আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু ও রেজাউল হাসান কয়েস লোদী শাবি ক্যাম্পাসে যান। তবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পংকী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করছি।’

সাবেক শিক্ষার্থী আইনজীবীদের মানববন্ধন : শাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের জীবন ও শিক্ষার নিরাপত্তা দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকালে শাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের উদ্যোগে সিলেট জজ কোর্টের সামনে এ মানববন্ধন হয়। এতে অ্যাডভোকেট সেলিম মু. আলী আসগরের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রবের পরিচালনায় বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার ফজল চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আল আসলাম মুমিন, অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন মাখন প্রমুখ।

আগুনে যেন ঘি ঢালা না হয় : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেন ‘আগুনে ঘি ঢালা না হয়’ সেদিকে দৃষ্টি রাখতে বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সিলেট নগরীর পাঠানটুলায় একটি মাদরাসার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, একটু সময় দিয়ে, বুঝিয়ে, তাদের (শিক্ষার্থী) সঙ্গে কাজ করে সব সমাধান করতে হবে। কোনো হঠকারী বিষয় যেন তাদের ওপর চাপিয়ে না দেওয়া হয়। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। শাবির ঘটনায় যেন আগুনে ঘি ঢালা না হয়। তিনি আরও বলেন, ‘শাবিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তাদের ছেড়ে যেতে আমরা পারি না। আমরা তাদের মঙ্গল চাই। এ ব্যাপারে মুখোমুখি না হয়ে বসে আলোচনা করে সমাধান করা উচিত।’ সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বিষয়টির সমাধানে আন্তরিক বলেও জানান তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিক্রিয়াশীল দল সব সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছু হলে আঙুল দেবে। তারা তো বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করে না। তাদের ধারণা, বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশ আরও উত্তম। প্রতিক্রিয়াশীল ও আধা প্রতিক্রিয়াশীল সুবিধাবাদী কিছু চক্র আছে, যারা নানাভাবে ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ খুঁজছে। তারা সুযোগ নেবে, এটাই রাজনীতির নিয়ম। তবে প্রতিক্রিয়াশীলদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর