বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মুদ্রাবাজারে আবারও অস্থিরতা

এক মাসে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশ, খোলাবাজারে ডলার পাউন্ড ইউরোর দাম ঊর্ধ্বমুখী

মানিক মুনতাসির

মুদ্রাবাজারে আবারও অস্থিরতা

দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আবারও অস্থিরতা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামলাতে গতকালও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো হয়েছে। সকালের রেটের সঙ্গে বিকালের রেটও মেলে না। বিশেষ করে খোলাবাজারে ডলার, ইউরো, পাউন্ডের দাম বেড়েই চলেছে। এতে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বাড়ছে।

একই সঙ্গে খরচ বাড়ছে আমদানির। ভ্রমণপিপাসুদেরও খরচ বাড়ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্য ও জ্বালানি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় এর একটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে।

এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় মানুষের বিদেশ ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে কিংবা ঘুরতে মানুষের বিদেশ ভ্রমণের মাত্রা বেড়েছে। এটা প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে ডলার, পাউন্ড, ইউরো, রিয়ালসহ নানা ধরনের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে। তবে ডলারের চাহিদা   বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কেননা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারই একমাত্র বিনিময়ের মাধ্যম।

পরিস্থিতি সামলাতে টাকার মান কমানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গতকাল ডলারের দাম ৫০ পয়সা বেড়েছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতকাল (২৮ জুন) এক ডলারের জন্য ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা খরচ করতে হয়েছে গ্রাহকদের, যা দেশে ডলারের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড। সোমবার এই ডলারের দাম ছিল ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা। একইভাবে ইউরোর দামও ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে, যা ছয় মাস আগেও ৯৭ থেকে ৯৮ টাকা ছিল। ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম ছাড়িয়েছে ১১৪ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বছরের ৩০ জুন প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এক মাস আগে ৩০ মে ব্যয় করতে হয়েছে ৮৯ টাকা। আর গতকাল এক ডলারের জন্য ব্যয় করতে হয়েছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এতে অবশ্য রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। এর ফলে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। যার প্রভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যসহ আমদানি পণ্যের মূল্য, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাড়ছে মূল্যস্ফীতির চাপ। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। অস্বাভাবিক হারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গত মে মাসে ডলারের দাম বেড়ে খোলাবাজারে ১০২ টাকা অতিক্রম করে রেকর্ড গড়েছিল। সে সময় বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা আবার কমে আসে। বর্তমানে খোলাবাজারে ৯৯ টাকায় ডলার বেচাকেনা হচ্ছে। গতকালও খোলাবাজারে ৯৮ দশমিক ৫০ থেকে ৯৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে প্রতি ডলার। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক মাস আগের তুলনায় বর্তমানে ডলারের বাজারে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়লে বাজারে সরবরাহ আরও বাড়বে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়ালে বাজারে অস্থিরতা কমে আসবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে খোলাবাজার ও আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের মধ্যে তফাৎ কমানো। কিন্তু এ কাজ করা বেশ কঠিন বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে আমদানি ব্যয় বাড়তে শুরু করে। এতে ডলারের চাহিদা ও দাম বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমতে থাকে। এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত আছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ এই সংকটে আরও ঘি ঢেলেছে। যার ফলে জ্বালানির মূল্য বেড়েছে দফায় দফায়। এর প্রভাবে ডলারের বাজারের অস্থিরতা এখনো বিরাজমান। তবে এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ খবর