শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
ফারুকী হত্যাকাণ্ড

আট বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত!

চার্জশিট আটকে আছে দুই পরিকল্পনাকারীর জন্য

সাখাওয়াত কাওসার

আট বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত!

আট বছরেও শেষ হয়নি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের ইসলামিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। এরই মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের কাছ থেকে ৫৩ বার সময় চেয়েছেন।

চাঞ্চল্যকর ওই ঘঠনায় গ্রেফতার ৯ জনের মধ্যে দুজন নিজেদের অপরাধ কবুল করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কারা, কীভাবে, কেন, কাদের পরিকল্পনায় ফারুকী হত্যা তাদের জবানিতে সবকিছু উঠে এসেছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলার তদন্তকাজ শেষ। তারা হত্যাকাণ্ডের দুজন অন্যতম পরিকল্পনাকারীর নাম জানতে পেরেছেন। তাদের গ্রেফতারের জন্যই সময় লাগছে। অন্যদিকে নিহতের পরিবারের সদস্যদের আশঙ্কা, কেউ হয়তো পর্দার নেপথ্য থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। এ জন্যই এতটা সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলার তদন্তে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কাছে গ্রেফতার হওয়া হাদিসুর রহমান সাগরের জবানিতেই বেরিয়ে আসে মাওলানা ফারুকী হত্যার বিষয়টি। ফারুকী হত্যার ততদিনে চার বছর পেরিয়ে যায়। ২০১৮ সালের ৩০ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রথম জবানবন্দি দেন হাদিসুর রহমান সাগর। দুর্র্ধর্ষ এই জঙ্গির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মধ্য দিয়ে মূলত এই মামলার জট খুলতে শুরু করে। কেন, কারা, কী কারণে তাকে হত্যা করেছে তা জানতে পারে তদন্তসংশ্লিষ্টরা। হত্যা পরিকল্পনায় ছিল জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আর হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু গুছিয়ে এনেছি। কেবলমাত্র দুজনের জন্যই অপেক্ষা। এরা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। অভিযোগপত্র (চার্জশিট) প্রস্তুত করা হচ্ছে।’ দুজন গ্রেফতার না হলে চার্জশিট কি আরও পেছাবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাদের গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। নইলে সিনিয়র স্যারদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে চার্জশিট হয়তো জমা দেওয়া হবে।’

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাতে ১৭৪/পূর্ব রাজাবাজার এলাকার ভাড়া দোতলায় স্ত্রী ও স্বজনদের আটকে রেখে নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলার তদন্তভার প্রথমে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে থাকলেও পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দায়িত্ব পায়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। তারা হলেন- হাদিসুর রহমান সাগর, আবু রায়হান, আবদুল গফ্ফার, মিঠু প্রধান, খোরশেদ আলম, রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজ, তারিকুল ইসলাম ওরফে মিঠু, খালেক ব্যাপারী ও মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে সাঈদ, আবদুুল্লাহ আল তাসনীম ওরফে নাহিদ। এদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন কারাগারে আছেন। শেষের পাঁচজন জামিনে আছেন। হাদিসুর রহমান সাগরের পর গত ২৭ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তাসনীম ওরফে নাহিদ। জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের আমির ছিলেন তাসনীম।

নিহত ফারুকীর বড় ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী বলেন, ‘বাবা খুন হয়েছেন আট বছর হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত মামলার তদন্ত শেষ হলো না। বাবার খুনিদের বেশির ভাগ এখনো গ্রেফতার হয়নি।’

সাগর ও তাসনীমের জবানির বরাত দিয়ে সিআইডি সূত্র জানায়, ফারুকী হত্যায় জেএমবির মাওলানা সাঈদুর রহমানের গ্রুপ ও আবদুর রহমান ওরফে সারওয়ার জাহান মানিক ও ডা. নজরুল ইসলামের গ্রুপ অংশ নেয়। কিলিং মিশনের মূল কমান্ডার ছিলেন আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে জামাই ফারুক। ফারুক ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। ফারুকী হত্যার আগের দিন ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট সন্ধ্যায় আশুলিয়ায় একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পাশে বৈঠক করে চূড়ান্ত হয় ফারুকী হত্যার ছক। হত্যাকারীরা মনে করছিল, ফারুকী বিভিন্ন মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিতেন। তাছাড়া আল্লাহ এবং হাদিস সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য দিতেন, যা কোনোভাবেই কোরআন-হাদিস সমর্থন করে না। এ জন্য জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। সাগরের দাবি, ফারুকী হত্যায় দুটি টিমের মধ্যে তাসনীমের নেতৃত্ব একটি টিম ফারুকীর বাসায় ঢুকে হত্যাকাণ্ড চালায়। তার (হাদিসুর রহমান সাগর) নেতৃত্বে আরেকটি ব্যাকআপ টিম বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে।

র‌্যাব সদর দফতর থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানের মুখে পালাতে গিয়ে নিহত হন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন (জেএমবি) সারোয়ার তামিম গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান মানিক। জামাই ফারুক ২০১৫ সালে ভারতে গ্রেফতার হন।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর