শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

অগ্রগতি নেই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে

উৎপাদন হচ্ছে ৯১০ দশমিক ৭৮ মেগাওয়াট, জমির স্বল্পতা ও উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাধা

জিন্নাতুন নূর

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গত এক যুগে বাংলাদেশ ইতিবাচক সফলতা দেখালেও বিকল্প জ্বালানি তথা নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় আরও অনেক দেশের মতো বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। আবার দেশি গ্যাসের উৎপাদন কমে আসায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানিতে টান পড়ছে। এ অবস্থায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সাশ্রয়ী হলেও সীমিত উৎপাদনের কারণে বাংলাদেশ বিকল্প এ জ্বালানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমির স্বল্পতা ও উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতির কারণে এ খাতে অগ্রগতি কম। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রাপ্তি কম হলেও প্রযুক্তি উন্নত হওয়ায় আসছে দিনে এর ব্যবহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্যানুযায়ী, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৯১০ দশমিক ৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে অফগ্রিড ও অনগ্রিড মিলিয়ে উৎপাদিত হচ্ছে ৬৭৬ দশমিক ৭৯ মেগাওয়াট। অফগ্রিড ও অনগ্রিড মিলিয়ে বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে ২ দশমিক ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে ২৩০ মেগাওয়াট। বায়োগ্যাস  থেকে দশমিক ৬৯ ও বায়োমাস থেকে দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। সরকার সারা দেশে ৩৯টি সোলার পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও এর মধ্যে মাত্র আটটি উৎপাদনে এসেছে। ননগ্রিড সৌরবিদ্যুতের মূল উৎস বাড়িতে লাগানো সোলার হোম সিস্টেম। দেশে প্রায় ৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম রয়েছে। এ ছাড়া নেট মিটারিং রুফটপ, সোলার ইরিগ্রেশনসহ আরও বিভিন্ন মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমক্ষতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৯১০ দশমিক ৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এটি সর্বমোট সক্ষমতার ৪ শতাংশেরও কম। যদিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১০ শতাংশে (২ হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট) পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল, যা অর্জিত হয়নি।

প্রতিবেশী দেশ ভারতেও মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশ (১৫৮ গিগাওয়াট) আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। আবার ইউরোপের অনেক দেশ ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসছে। কোস্টারিকা, পর্তুগাল, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের মতো দেশগুলো প্রায় শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় ৩০ বছর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কাজ শুরু করলেও বাংলাদেশ ২০০৮-১০ সালের দিকে শুরু করে। এ খাতে কাজ করার জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে সময় লাগছে। আবার এ প্রযুক্তি থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার যে যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় সেগুলোও উচ্চমূল্যের। তবে এসব যন্ত্রপাতির মূল্য কমে আসায় কিছুটা স্বস্তি মিলছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত জমি না থাকাও এ খাতে অগ্রগতি না হওয়ার অন্যতম কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিনিউবল এনার্জির পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এজন্য আমাদের প্রাপ্তিও খুব বেশি না। রুফটপ সোলারসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে। আশা করছি ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে এখন পর্যন্ত সোলার পিভিতেই অগ্রগতি বেশি। অন্য খাতগুলো প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় তা এখনো পিছিয়ে আছে। যেহেতু আমাদের ছোট দেশ এবং রিসোর্সও সীমিত এজন্য সরকার সৌরবিদ্যুতের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে এবং এ খাত তুলনামূলক এগিয়ে আছে। এ খাতে গতি ধরে রাখতে নবায়নযোগ্য খাতের জন্য সরকার যাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তাদের এ খাতেই মনোযোগ দিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তারা অন্য খাতে চলে যায়। যেহেতু এখন প্রযুক্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। আশা করছি ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য খাতের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে সরকার ও জনগণ সবারই বিকল্প এ মাধ্যমের ওপর ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রয়েছে। লক্ষ্য রাখতে হবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ যাতে কম থাকে। তাহলে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।’ সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা। যার মধ্যে মূল ভূমিকা রাখার কথা ২ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুতের। এ ছাড়া পানি ও বায়ু থেকে যথাক্রমে ১ হাজার ও ৫৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা। নির্মাণাধীন সৌরভিত্তিক প্রকল্প ছাড়াও আছে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর