শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভোটাররা বঞ্চিত হবেন

-ড. এম সাখাওয়াত হোসেন

গোলাম রাব্বানী

ভোটাররা বঞ্চিত হবেন

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) বলেছেন, ইলেকট্র্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে নির্বাচন কমিশন নিজেরাই সংশয়ের মধ্যে আছে। ইসি নিজেই বুঝতে পারছে ইভিএমে আঙুলের ছাপ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তৃণমূলের মানুষও ইভিএম বুঝতে পারেন না। আঙুলের ছাপে নির্বাচন সঠিকভাবে হবে না। অনেক ভোটার ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করে, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে এই যন্ত্র ব্যবহারের কথা বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ইভিএমে ভিভিপ্যাট যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন নিজেরাই সংশয়ের মধ্যে আছে। প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা কোথায় পাবে? তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করতে নতুন করে ১০ আঙুলের ছাপ নেবে ৬ কোটি ভোটারের। এর মানে হচ্ছে অনেক ভোটার বাদ পড়ে যাবেন। ভোটার বাদ পড়ে যাবেন তার কারণ হচ্ছে- ৬ কোটি ভোটারের নতুন করে আঙুলের ছাপ নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ইসির এমন কোনো অর্গানাইজেশন নেই, যার মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করতে পারবেন যে, সব ভোটার আঙুলের ছাপ দিয়েছেন। ১০ আঙুলের ছাপ তথা একটা না মিললে আরেকটা, এমন করতে গেলে আরও সময় যাবে। 

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, যেখানে ইসি নিজেই বুঝতে পারছে আঙুলের ছাপ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। ইভিএমে ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে তারা ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। যেখানে ৫ ভোটেও কেউ কেউ (প্রার্থী) জিতে যান। সেখানে ১ শতাংশ ভোটে ৫০০ ভোটার থাকলে ৫ ভোট। তবে ১ শতাংশের জায়গায় কয় শতাংশ হবে আমরা জানি না। এক বুথে ১ শতাংশ, সেখানে ১০টি বুথ থাকলে ৫০টি ভোট হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ইভিএমে যদি ভোট করতে হয়, তবে ভোটার ফ্রেন্ডলি ইভিএম করতে হবে। এ ছাড়া তিনি ইভিএমে ভিভিপ্যাট লাগানোর পরামর্শ দেন। ইভিএমেও তো ইসি বুথ ক্যাপসার করা থেকে রক্ষা করতে পারছে না।

তিনি বলেন, ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করলে ভোটারদের ভোগান্তি তো হবেই। ইসির কোনো আইডিয়া আছে? যে ৬ কোটি মানুষের নতুন করে আঙুলের ছাপ নিতে হলে কী ধরনের অর্গানাইজেশন লাগবে। আমরা তো পুরা সেনাবাহিনী দিয়ে ৮ কোটি মানুষকে ভোটার করেছি। এখন প্রায় ৬ কোটির কাছাকাছি ভোটারের নতুন করে ১০ আঙুলের ছাপ কারা নেবেন? কারা করবেন এটা?

তিনি বলেন, একটা ইভিএমের খরচ, নতুন করে ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়ার খরচ, সিসি ক্যামেরা লাগানোর খরচ। তবে কি ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে নির্বাচন হবে। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা তো ইভিএম প্রকল্পেই লাগবে। ইসি বলছে সিসি ক্যামেরা লাগাবে। এই ক্যামেরায় কত কোটি টাকা লাগবে? আবার ভোটারদের ডেকে ডেকে আঙুলের ছাপ নেবেন, তাতে কত কোটি টাকা লাগবে?

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করে ইসি স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে। আর ১০ আঙুলের ছাপ নতুন করে নেওয়ার চিন্তা না করে তারা অন্য কোনো চিন্তা করুক। আঙুলের ছাপে নির্বাচন সঠিকভাবে হবে না। অনেক ভোটার ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। বলেন, এত কারিগরি করার দরকার কী? যেখানে তৃণমূলের মানুষ ইভিএম বুঝতে পারেন না।

তিনি বলেন, প্রথমত, নির্বাচন কমিশন যে ইভিএমে ভোট নিতে চাচ্ছে, নিয়মটা বেশির ভাগ ভোটারের তো মেনে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন সংলাপটা কেন করল? এর থেকে কী আহরণ করল? এই নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ার পর তারা শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, নাগরিক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসেছে। আমি যতটুকু জানি, তাদের বেশির ভাগই ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বলেন, বর্তমান ইভিএম নিয়ে আমারও কারিগরি সংশয় আছে। এই ইভিএম নিয়ে চাইলে কোনো কেস করা যাবে না। কারণ, এর কোনো ভিভিপ্যাট নেই। ব্যালট পেপারে ভুয়া ভোট হয়েছে কি না, গণনাতে কারচুপি হয়েছে কি না, এগুলো বের করার অনেক উপায় আছে। ইভিএমে যা সম্ভব নয়। এ কারণে ভারতে ইভিএমে ভিভিপ্যাট যুক্ত করেছে।

তিনি আরও বলেন, সেই ব্যবস্থা না করে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণায় যেটা হবে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পারবেন না। কারণ, আঙুলের ছাপ মেলাতেই সময় পার হয়ে যাবে। এই কারিগরি ত্রুটি ছোট নয়, বেশ বড়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর