শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
পিবিআইর প্রতিবেদন দাখিল

আবারও প্রমাণিত হলো নুসরাতের করা ‘মুনিয়া হত্যা মামলা’ অসত্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুনিয়ার মৃত্যুকে হত্যাকান্ড দাবি করে তার বোন নুসরাত তানিয়া যে মামলা করেছিলেন, সেই মামলাটির কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। মুনিয়া আসলে আত্মহত্যা করেছে। ধর্ষণেরও ঘটনা ঘটেনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই মামলাটি বাতিল এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ আটজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করে পিবিআই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইর এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো নুসরাতের করা মুনিয়া হত্যা মামলাটি অসত্য।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমীন আরা গতকাল পিবিআইর প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেছেন। পিবিআইর আবেদনটি করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আসরাফ উদ্দিন।

গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গত বছরের ২৬ এপ্রিল রাতে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে একটি হয়রানিমূলক অসত্য মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় গুলশান থানার পুলিশ তদন্ত করে এবং তদন্ত করে আত্মহত্যার প্ররোচনার কোনো আলামত পায়নি মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। এমনকি ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও আত্মহত্যার প্রমাণ মিলেছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গত ১৮ আগস্ট পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। ফলে মামলা থেকে অব্যাহতি পান সায়েম সোবহান আনভীর। আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের পর এর বিরুদ্ধে মুনিয়ার বোন নুসরাত তানিয়া একটি নারাজি দরখাস্ত দেন। নারাজি দরখাস্তটিও বাতিল করে দেন আদালত। এরপর গত বছর সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় দফা হয়রানিমূলক মামলা করা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ আটজনের বিরুদ্ধে। এ মামলায় অনাকাক্সিক্ষতভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজনকেও জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। যাঁদের এ ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ মুনিয়ার বোন নুসরাত তানিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলাটি গ্রহণ করে আদালত এটির তদন্তের দায়িত্ব দেন পিবিআইকে। পিবিআই দীর্ঘ তদন্ত শেষে গতকাল চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মুনিয়ার মৃত্যুতে হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। মুনিয়া আত্মহত্যাই করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এটি আত্মহত্যা। এমনকি আত্মহত্যা করার ক্ষেত্রে কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়েছে বলেও তদন্তে পায়নি পিবিআই।

পিবিআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম মামলায় গুলশান থানা যে তদন্ত করেছে সেই তদন্তেই প্রমাণিত হয়েছে, এটি আত্মহত্যার প্ররোচনা নয় এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় ওই তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পিবিআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, হত্যাকান্ড প্রমাণের মতো কোনো তথ্য-উপাত্তই বাদী উপস্থাপন করতে পারেনি। বরং এই মামলাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, হয়রানিমূলক এবং এক ধরনের চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবেই করা হয়েছে। এর ফলে এই মামলাটি আর চলবে না মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় আবারও প্রমাণিত হলো নুসরাতের করা ‘মুনিয়া হত্যা মামলা’ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান বলেন, এই মামলায় যে কয়জনকে আসামি করা হয়েছিল, সবাইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে এখানে দুটি অভিযোগ আছে। একটি ধর্ষণ, আরেকটি হত্যাকান্ড। কিন্তু একটির বিষয়েও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এখানে সুইসাইডের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের কিছুই পাওয়া যায়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু মামলা তদন্তে তারা ধর্ষণ বা হত্যার আলামত পাননি, তাই যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে-তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের কোনো প্রয়োজন পড়েনি।

সর্বশেষ খবর