সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিকল্প ভাবছে বিএনপি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তুরাগ নদের তীর ছাড়া অন্য স্থান হলে ভেবে দেখা হবে বললেন ফখরুল প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে আরামবাগের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তুরাগ নদের তীর ছাড়া রাজধানীতে নয়াপল্টনের বিকল্প গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব দিলে সেটা বিবেচনা করবে বিএনপি। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানিয়েছেন। এ সময় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, যে কোনো স্থানে সমাবেশ করব এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার, এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। সেখানে আগ বাড়িয়ে নাশকতা হবে বলে আমার সাংবিধানিক অধিকারকে আপনারা লঙ্ঘন করছেন, কেড়ে নিচ্ছেন। আমরা ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করব সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করছেন। দয়া করে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করবেন না। আমরা যে আরও নয়টি সমাবেশ করেছি ঠিক একইভাবে ঢাকার সমাবেশ সম্পন্ন করব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার এক সর্বনাশা প্রতিশোধ-স্পৃহায় মেতে উঠেছে। ঢাকার গণসমাবেশকে বানচাল করতে সরকার নানামুখী দমননীতি নিয়েছে। গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসন ‘গণতন্ত্রের মাতা’ সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বাসার সামনে সেই বালির ট্রাকের কায়দায় চেকপোস্ট-বেরিকেড দিয়ে পুলিশ অবরোধ করে রেখেছে। এটি দেশনেত্রীর ওপর নিপীড়নের আরেকটি নতুন মাত্রা। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার এক সুদূরপ্রসারী অশুভ ‘মাস্টারপ্ল্যানের’ পথে হাঁটছে। তারা জঙ্গিবাদের কথা বলে জঙ্গি সৃষ্টি করতে চায়, অগ্নি সন্ত্রাসের কথা বলে, অগ্নি সন্ত্রাস করতে চায়। একটি নাশকতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। তিনি আরও বলেন, ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পিছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশকে তারা ফোকলা করে দিয়েছে : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির কাউন্সিলে বলেছেন, ২৫ হাজার টাকার জন্য কৃষক জেলে যান, কিন্তু ২৫ হাজার কোটি টাকা যারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে কিছুই করা হচ্ছে না। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়। দুই মাসের মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এক ব্যাংক থেকে। এভাবে প্রতিটা ব্যাংক সাফ করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে তারা ফোকলা করে দিয়েছে, ঋণখেলাপি করে দিয়েছে। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও জেএসডির নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, রাষ্ট্র চিন্তার হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, সিরাজ মিয়া, তানিয়া রব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

স্থান নিয়ে আলোচনা করবে পুলিশ ও বিএনপি : ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য নয়াপল্টনে স্থান না দিলে পুলিশের নির্ধারণ করে দেওয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও যাবে না বিএনপি। তৃতীয় কোনো স্থানে সমাবেশ করা যায় কি না, সেই বিকল্প স্থান খুঁজতে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও পুলিশের একজন ঊর্ধŸতন কর্মকর্তা বৈঠক করবেন। সূত্র জানায়, বিকল্প হিসেবে বিএনপি এখন আরামবাগের কথাও ভাবছে। এ নিয়ে আজই প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব তথ্য জানান।  বিএনপির প্রতিনিধি দলে আমানউল্লাহ আমান ছাড়াও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আমানউল্লাহ আমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নয়টি বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছি। সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের উসকানি সত্ত্বেও কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। ঢাকায় নয়াপল্টনের অনুমতি দিলেও সেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না বলে আমরা পুলিশকে আশ্বস্ত করেছি। তিনি বলেন, সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা এবং গ্রেফতার চলছে। ৩০ নভেম্বরের পর থেকে সারা দেশে প্রায় ২ হাজার ৭০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ঢাকাতেই ৭৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবে গ্রেফতার, হয়রানি করে সমাবেশের জনসমুদ্র ঠেকানো যাবে না। অবিলম্বে এই গ্রেফতার বন্ধ করতে বলেছি।  মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রশ্নেই ওঠে না। আমরা সমাবেশের জন্য নয়াপল্টনের ভেন্যুর কথাই জানিয়েছি। তবে পুলিশ এ বিষয়ে আরও আলোচনায় বসতে চেয়েছে। আমরাও তাতে রাজি হয়েছি।  আলোচনার মাধ্যমে বিকল্প কিছু হলে সেটা পরে জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, সমাবেশের আগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বন্ধের দাবি জানিয়েছি। সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপির জামিনে থাকা নেতা-কর্মীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এর আগে গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। নয়াপল্টনে গণসমাবেশ নিয়ে কেন অনড় অবস্থানে আছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে কোনো স্থানে সমাবেশ করা আমাদের অধিকার। নাশকতা হবে, বিশৃঙ্খলা হবে, এটা বলে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণœ করা হচ্ছে।

অনুমতি না পেলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনুমতি না পেলে কী করব, সেটাও জানতে পারবেন। 

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিকল্প প্রস্তাব দিলে বিবেচনা করবেন। তবে সেটা অবশ্যই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর