মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মেসিময় এক বিশ্বকাপ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কাতার থেকে

মেসিময় এক বিশ্বকাপ

তিনি হাসলে আর্জেন্টিনা হাসে। তিনি কাঁদলে আর্জেন্টিনা কাঁদে। গত রবিবার যেমনটা কাঁদল। যেভাবে হাসল। বিশ্বকাপের ট্রফিটা নিশ্চিত করার পর চোখের অশ্রু লুকিয়ে রাখতে পারেননি লিওনেল মেসি। অনেক হতাশার পর যখন কোনো স্বপ্ন পূরণ হয়, তার আনন্দের রূপটা হয়তো এমনই হয়! যেমনটা মেসির হলো! মেসি কাঁদলেন। কাঁদালেন। মেসি হাসলেন। হাসালেন। পুরো আর্জেন্টিনাকে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আর্জেন্টিনার কোটি কোটি সমর্থককে। বিশ্বকাপ জিতেছেন মেসি। হয়তো এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। বয়স ৩৫। তারপরও আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলবেন মেসি, এমনটাই নিশ্চিত করেছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আট বছর আগে লিওনেল মেসির অসহায় এক রূপ দেখেছিল দুনিয়া। বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার নিতে যাওয়ার সময় তিনি আক্ষেপ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন সোনা রঙা ট্রফির দিকে। আট বছর পর সেই লিওনেল মেসিকে দেখল বিশ্ব। এবার তিনি ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো আর কাতারের আমির তামিম আল থানির কাছ থেকে বিশ্বকাপ ট্রফিটা নেওয়ার আগেই চুমু খেয়ে নেন। বিশ্বকাপ ট্রফিটা হাতে নেওয়ার জন্য কতটা মরিয়া ছিলেন লিওনেল মেসি- এটাই তার প্রমাণ।

লিওনেল মেসি কাতার বিশ্বকাপটা শুরুর করার আগেই নাকি দ্বৈববাণী পেয়েছিলেন! তার মনের কোণে সংবাদটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। এটাই তোমার সময় মেসি। এবারই তুমি পারবে। এই অনুভূতিই মেসিকে তাতিয়ে দিয়েছে আরও বেশি করে। তিনি খেলেছেন। গোল করেছেন। গোল করিয়েছেন (৭ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট)। বিশ্বকাপটা জিতেছেন। আর্জেন্টিনার বহুদিনের আক্ষেপ দূর করেছেন। বিশ্বকাপটা জয় করার পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে আরও বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলতে চান লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপে আর তাকে দেখা যাবে না। আন্তর্জাতিক ফুটবলেও খুব বেশি দিন দেখা যাবে না মেসিকে। ফুটবলটা হয়তো এরপর আর কখনই এত সুন্দর করে কেউ তুলে ধরতে পারবে না পৃথিবীর সামনে।

লিওনেল মেসি একটি জাতিকে মুক্তির আনন্দ উপহার দিয়েছেন। যে জাতি বিশ্বকাপ জয়ের আশায় দিনের পর দিন প্রহর গুনছিল। কড়ায় গণ্ডায় হিসেব রাখছিল। এক দিয়েগো ম্যারাডোনা চলে যাওয়ার পর কত ম্যারাডোনা এসেছিল! আয়ালা, রিকুয়েলমে, ক্রেসপো। আরও কতজনকেই না ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা করেছে আর্জেন্টাইনরা। অবশেষে বুঝেছে, এসব তুলনায় কোনো কাজ হবে না। এমন একজনকে আসতে হবে, যিনি ম্যারাডোনার ছায়া থেকে বেরিয়ে আপন মহিমায় উজ্জ্বল হবেন। তিনি এলেন। লিওনেল মেসি এলেন। ম্যারাডোনার ছায়া থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি। ছাড়িয়ে গেলেন অতীতের সবকিছু। পেলে-ম্যারাডোনা বিতর্ককে পেছনে ফেলে তিনি স্থান করে নিলেন এক অনন্য জায়গায়।

কাতার বিশ্বকাপ ছিল লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপটা ছিল মেসির কাছে ফুটবলের ঋণ পরিশোধ করার বিশ্বকাপ। ফুটবলকে লিওনেল মেসি যা কিছু দিয়েছেন তা আর কেউ দিতে পারেননি। এতদিন তিনি ছিলেন কেবলই ক্লাব ফুটবলার। অন্তত লোকে তাই বলত। বার্সেলোনার জার্সিতে একের পর এক ট্রফি জিতেছেন। গোলের পর গোল করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। ইতিহাসের সেরা এমনসব গোল করেছেন, যেগুলো হয়তো কল্পনায় ছিল এতদিন। সেই কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন লিওনেল মেসি। এখন তিনি সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন। মুছে দিয়েছেন অতীতের সব কালিমা। দারুণ গৌরবে মেসি এখন সবার ওপরে উঠে গেছেন। ফুটবল দুনিয়ায়। গ্যারি লিনেকার মেসিকে খেলতে দেখে বিমুগ্ধ হয়েছেন। আরও বহু কিংবদন্তিই মেসিকে খেলতে দেখে বিমোহিত হয়েছেন। লিনেকার বলেছেন, ‘ফুটবলটা এরপর (মেসির অবসরের পর) আর কখনই আগের মতো সুন্দর থাকবে না।’ মেসিকে ছাড়া ফুটবলের সৌন্দর্য সত্যিই অনেকটা ম্লান হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে সোনালি আভা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর