শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তৃণমূলে জনমত গড়তে জেলায় জেলায় বিএনপি নেতারা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

তৃণমূলে জনমত গড়তে জেলায় জেলায় বিএনপি নেতারা

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ নানা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে ১১ জানুয়ারি সারা দেশে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে বিএনপির উদ্যোগে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। বিভাগীয় গণ-অবস্থান কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। জানা যায়, ১০ সাংগঠনিক বিভাগে ওই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হবে। প্রতিটি সাংগঠনিক বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্মমহাসচিবকে দলনেতা করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হলেন- কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, চট্টগ্রামে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ময়মনসিংহে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকায় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খুলনায় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রাজশাহীতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, ফরিদপুরে যুগ্মমহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সিলেটে যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশালে যুগ্মমহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। জানা যায়, তৃণমূলে জনমত গড়তে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। তাই কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় গিয়ে আন্দোলন চাঙা করতে কাজ করছেন। তারা আন্দোলনের ১০ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা/মহানগর কমিটির সব নেতা, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের শীর্ষ নেতারা কর্মসূচির সার্বিক সমন্বয় করবেন। ৩ জানুয়ারি বিএনপির শীর্ষ নেতারা জেলায় জেলায় সফর শুরু করছেন, যা শেষ হবে ১০ জানুয়ারি।

তৃণমূলে জনমত তৈরিতে ইতোমধ্যে ৩ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ, জামালপুর, ফেনী ও ঝিনাইদহে; ৪ জানুয়ারি নীলফামারী ও সৈয়দপুর, লক্ষ্মীপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ ও শেরপুরে; ৫ জানুয়ারি সিলেট জেলা ও মহানগর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, পাবনা, দিনাজপুর, বরগুনা, খাগড়াছড়ি ও জয়পুরহাটে; ৬ জানুয়ারি পটুয়াখালী, হবিগঞ্জ, নড়াইল, নাটোর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাঙামাটিতে শীর্ষ নেতারা সফর করেছেন। আজ ৭ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ, মাগুরা, মৌলভীবাজার, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ফরিদপুর জেলা ও মহানগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, চাঁদপুর, নেত্রকোনা, ভোলা ও বান্দরবানে সফর করবেন। এ ছাড়া ৮ জানুয়ারি কুমিল্লা মহানগরী, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার, গাজীপুর জেলায়; ৯ জানুয়ারি ঢাকা জেলা, সিরাজগঞ্জ, ঝালকাঠি, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, পিরোজপুর, গাইবান্ধা, শরীয়তপুর, মেহেরপুরে এবং ১০ জানুয়ারি পঞ্চগড় ও রাজশাহী জেলা ও মহানগরীতে বক্তৃতা করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি থাকলেও সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। তারা বলছেন, এবারের আন্দোলন হবে ভিন্ন। অবস্থা বুঝে পদক্ষেপ। ১১ জানুয়ারি কেন্দ্রঘোষিত বিভাগীয় গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে বড় গণজমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে আন্দোলনমুখী ধারায় রাখা ও মাঠে শক্তিমত্তার জানান দিতে চায়। তারা ওইদিন সমমনা দলগুলো নিয়ে বিভাগীয় শহরগুলোয় শোডাউন করবে। পূর্বঘোষিত এ গণ-অবস্থান সফল করতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা করে চলেছে।

১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ ১০ দফা দাবি পেশ করে। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদারের অংশ হিসেবে ১৯ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি। এ রূপরেখা অনুসারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় যেতে পারলে যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে দলটি। এরপর আন্দোলনের রূপরেখা অনুসারে ২৭ দফা রাষ্ট্র মেরামত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

এদিকে সুযোগ পেলেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছেন। যার কারণে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে বারবার হোঁচট খাচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সমাবেশে বলে আসছেন, এ সরকারকে আর সময় দেওয়া হবে না। কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। কিন্তু সরকারের সঙ্গে সমঝোতার কারণে স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে।

সামগ্রিক প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার যত চেষ্টাই করুক, যত নির্যাতনই করুক না কেন এ দেশে আর ভোট চুরির নির্বাচন হবে না। জনগণই হতে দেবে না। সর্বস্তরের মানুষ আজ রাজপথের আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচি পালনও শুরু হয়ে গেছে। সেই আন্দোলনে বিএনপির ১০ দফা দাবির প্রথম দফা হচ্ছে, এ সরকারের পদত্যাগ।

সর্বশেষ খবর