রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোজায় ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ

মানিক মুনতাসির ও শাহেদ আলী ইরশাদ

রোজায় ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ

প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে। অবশ্য দু-তিন সপ্তাহ ধরে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় বাজারে শাক-সবজির দামে কিছুটা স্বস্তির বাতাস বইছে। যদিও শৈত্যপ্রবাহ শুরুর আগেই প্রচ- শীতে গ্যাসের চাপ কমে অর্ধেকে নেমেছে। দিনভর গ্যাসের চুলা নিভুনিভু করছে। আর গ্রামের মানুষও শীত উপেক্ষা করে জীবন-জীবিকার তাগিদে কাজে যাচ্ছে। দূষিত বায়ু, শীতের প্রকোপ, গ্যাস সংকট ও চড়া দ্রব্যমূল্যকে সঙ্গে নিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ জন্য আসন্ন রোজায় সারা দেশে জনভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার মার্চের শেষ ও এপ্রিল জুড়ে থাকবে রমজান মাস। পবিত্র রোজা ও ঈদুল ফিতরে মানুষকে স্বস্তি দিতে চায় সরকার। এদিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা ডলার সংকট কাটেনি এখনো। ফলে আমদানি খাতে সরকারের বিধি-নিষেধ এখনো বিদ্যমান। আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ১০ বিলিয়নের বেশি ডলার প্রয়োজন হবে। আমদানিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হবে ভোজ্য তেল আমদানিতে। এ জন্য ব্যয় হবে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অর্থ বিভাগ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ঢাকাসহ সারা দেশে গ্যাসের চাপ বাড়াতে করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ জন্য মানুষকে স্বস্তি দিতে দ্র্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে বাজারে মনিটরিং বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদেরও। জেলায় জেলায় থাকা বাজার মনিটরিং টিমগুলো প্রয়োজনে পুনর্গঠনও করতে বলা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে তেল, চিনি, চাল, ডাল, ছোলার কৃত্রিম সংকট এড়াতে এবং আমদানি কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপ আমলে নিয়ে শহরাঞ্চলের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এসব পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হবে। যারা করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যাদের আয় কমে গেছে এমন পরিবারগুলোকে বাছাই করে ইতোমধ্যে অর্থ ও খাদ্য সহাতয়া দেওয়া হচ্ছে। তাদের আরও সহায়তা দেওয়া হবে রজমানে। রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট- আটটি বিভাগ থেকে পরিবারগুলোকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে সারা দেশেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল, চিনি, ডাল, খেজুর, তেল, পিঁয়াজসহ নিত্যপণ্য সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) আওতাও বাড়ানো হবে। এই কর্মসূচির আওতায় সারা দেশের অন্তত এক কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।

জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং কারসাজি ঠেকাতে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন করে কোনো পণ্যের দাম যেন না বাড়ে সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রোজার আগে আর কোনো সেবার দাম বাড়িয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াতে চায় না সরকার। টিসিবির হিসাবেও বাজারে এখন ৫০-৫৫ টাকার নিচে কোনো চাল পাওয়া যায় না। মোটা চালের চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেড়েছে বেশি। তবে শুধু চাল নয়, তেল, চিনি, পিঁয়াজ, মাছ-মাংস, সব ধরনের সবজরি দামই বাড়ছে অব্যাহতভাবে। এ জন্য অন্তত চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আর পুরো বাজার স্থিতিশীল করতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্য জেলায় জেলায় থাকা বাজার মনিটরিং টিমগুলোকে সক্রিয় করা হচ্ছে রোজার আগেই। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ খুবই অসহায়ত্বের মধ্যে সময় পার করছে। কেননা গত দু-তিন বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে বাড়তে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ এই সময়ে অধিকাংশ মানুষের আয় কমেছে বলে মনে করেন তিনি।

 

নিত্যপণ্য আমদানিতে প্রয়োজন ১০ বিলিয়ন ডলার : আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ১০ বিলিয়নের বেশি ডলার প্রয়োজন হবে। আমদানিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হবে ভোজ্য তেল আমদানিতে। এ জন্য ব্যয় হবে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। পুরো রোজার মাসে ৩ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এই পরিমাণ তেল বিশ্ববাজার থেকে আমদানির জন্য প্রতি টনের দাম ১ হাজার ৫০৬ ডলার হিসাবে ৬ বিলিয়নের বেশি ডলার প্রয়োজন। বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি টন চিনির ক্রুড বিক্রি হচ্ছে ৫২৮ ডলার। রোজার মাসের জন্য ৩ লাখ টন চিনি আমদানিতে ব্যয় হবে ১৫৮ কোটি ডলার। বছরে ৬ লাখ ৫০ হাজার টনের বেশি আপেল ও মাল্টা আমদানি হয়। রোজার মাসেই চাহিদার অর্ধেক আসে। সে হিসাবে প্রায় ৩ লাখ টন আপেল ও মাল্টা আমদানিতে ব্যয় হবে ২৫০ কোটি ডলার। এ ছাড়া ৫০ হাজার টন খেজুর আমদানিতে লাগবে প্রায় ১০ কোটি ডলার। ৬০ হাজার টন ছোলার জন্য সাড়ে ৩ কোটি ও ডাল আমদানিতে ব্যয় হবে প্রায় ৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে রোজায় নিত্যপণ্য আমদানির প্রয়োজনীয় ডলার বরাদ্দ চেয়ে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়টি পর্যালোচনা করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর