রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে আবারও বড় ধরনের মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর উমানে কয়েকটি ফ্ল্যাটের ওপর চালানো গতকালের হামলায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একজন মেয়র জানিয়েছেন, দনিপ্রো শহরে মিসাইলের আঘাতে তিন বছরের একটি শিশু এবং একজন নারী নিহত হয়েছেন। মধ্যাঞ্চলীয় আরও একটি শহর ক্রেমেনচুকেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, উমান শহরের যে ১০টি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকটি তার অন্যতম।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান বলেছেন, ৫১ দিনের মধ্যে এই প্রথম ইউক্রেনের রাজধানীতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলো। কিয়েভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেসামরিক মানুষের হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, ২৩টির মধ্যে ২১টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি ড্রোনও ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রাষ্ট্রীয় উদ্ধারকারী বাহিনী বলছে, হামলায় যে শিশুটি মারা গেছে, ২০২৩ সালেই তার জন্ম। এ ছাড়া আরও ১১ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে টেলিফোনে আলোচনার পরই এ হামলার ঘটনা ঘটল। যদিও ওই সংলাপকে অন্যান্য দেশের পর রাশিয়াও স্বাগত জানিয়েছে। মস্কো জানিয়েছে, ইউক্রেন সংকট অবসানের জন্য যে কোনো উদ্যোগকেই সাধুবাদ দিতে প্রস্তুত। তবে তা সত্ত্বেও রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর লক্ষ্য পূরণ করা প্রয়োজন। ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গও চীন ও ইউক্রেনের শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে চীন যে এখনো ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার নিন্দা করেনি, সেই বাস্তব এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।পাল্টা আক্রমণের আগেই রুশ হামলা : এ হামলার পর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, সর্বশেষ এ আক্রমণ থেকে আবারও প্রমাণ হচ্ছে যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। রাশিয়ার এ আক্রমণকে তিনি ‘বদমাশের’ কাজ বলে মন্তব্য করেন। ‘অশুভ শক্তিকে অস্ত্র দিয়ে থামানো সম্ভব। আমাদের রক্ষাকারীরা সেটা করছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়েও একে থামানো যাবে- আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়াতে হবে,’ এক টুইট বার্তায় বলেন জেলেনস্কি।
এদিকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সেই রেজনিকফ বলেছেন, রাশিয়ার ওপর পাল্টা আক্রমণ শানানোর জন্য তাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটো বলছে, তারা ইউক্রেনকে যেসব যুদ্ধ সরঞ্জাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার ৯৮ শতাংশই কিয়েভের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী অত্যাধুনিক এসব অস্ত্র দিয়ে রুশ সৈন্যদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান এবং প্রচুর গোলাবারুদ।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা যখন পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ট্যাংকসহ নতুন নতুন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করার কথা বলছেন, তখনই ইউক্রেনজুড়ে এই হামলা চালানো হলো। কী কারণে রাশিয়া গতকাল এ হামলা চালাল তা এখনো পরিষ্কার নয়, তবে এর আগেও মস্কো ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করেছে। মস্কো বলেছে, তারা বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করে হামলা চালায় না, তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু হওয়ার পর হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন।