প্রস্তুত ছিল শিরোপা উৎসবের মঞ্চ। শুধু অপেক্ষা সময়ের। কিংস অ্যারিনা গতকাল সেজেছিল লাল রঙে। দূর থেকে মনে হয়েছে কৃষ্ণচূড়ায় ছেয়ে গেছে গোটা স্টেডিয়াম। উপলক্ষ বসুন্ধরা কিংসের টানা চতুর্থ শিরোপা উৎসব উদযাপন। আগের ম্যাচেই শুরু হয়েছিল কিংসের কাউন্টডাউন। গতকাল সেই কাক্সিক্ষত মুহূর্তটি ধরা দেয়। রেফারির শেষবাঁশি বাজতেই ঢোলের তালে তালে কিংস অ্যারিনার গ্যালারি আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতেননি কিংসের ফুটবলাররা। ধীরস্থিরভাবে প্রতিপক্ষের ফুটবলারের সঙ্গে হাত মেলান সবাই। এরপর মাঠে বসে হাত উঁচিয়ে পরম করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আনিসুর রহমান জিকো, তারিক কাজিরা। গ্যালারি থেকে কিংসের লাল পতাকা হাতে দর্শক মাঠে ঢুকতেই ফ্লাডলাইটের আলোয় স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস উৎসবের মেলায় রূপ নেয়। ফুটবলার, কোচ, কর্মকর্তা- সবাই নতুন রঙের জার্সি পরে উৎসবে শামিল হন। জার্সির বুকে লেখা ‘চ্যাম্পিয়ন’। এতে স্পষ্ট হয়েছে, বসুন্ধরা কিংস শিরোপা উৎসবের সব প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে আসে। ক্লাবের এ প্রস্তুতি বৃথা যায়নি। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ডরিয়েলটন গোমেজের চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সে ৬-৪ গোলে জিতে ইতিহাস লেখে ইমরুল হাসান, অস্কার ব্রুজোনের বস্ন্ধুরা কিংস। ইতিহাস গড়া ম্যাচে, রেকর্ড গড়া ম্যাচে একাই ৪ গোল করেন ডরিয়েলটন। আশ্চর্য হলেও সত্যি, বাংলাদেশ পেশাদার লিগের চলতি মৌসুমে এই প্রথম কিংসের কোনো ফুটবলার হ্যাটট্রিক করেছেন। ১৮ গোল করে সবার ওপরে ডরিয়েলটন। এখনো কিংসের খেলা বাকি তিনটি। ঢাকা লিগ শুরু ১৯৪৮ সালে। সময়ের পরিক্রমায় চলতি লিগ পেরিয়েছে ৭৫ বছরে। ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ক্লাব টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অভিষেকেই চারবার, যা দেশের ফুটবল ইতিহাসে বিরল রেকর্ড। ২০০৭-০৮ মৌসুমে শুরু পেশাদার ফুটবল লিগ। এরপর ১৪ আসর গড়িয়েছে। ঢাকা আবাহনী সর্বোচ্চ ছয়বার, বসুন্ধরা কিংস চারবার, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব তিনবার এবং শেখ রাসেল একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টানা চতুর্র্থ শিরোপা জিততে বসুন্ধরা কিংসকে জিততেই হতো। ১০ গোলের ম্যাচ বসুন্ধরা জিতেছে ৬-৪ গোলে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ম্যাচে ৬ মিনিটে প্রথম গোল করে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা। রবসনের পাস ধরে বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলরক্ষক রানাকে পরাস্ত করে বাঁ পায়ের প্লেসিং শটে গোল করেন ডরিয়েলটন। ১৭ মিনিটে রবসনের শট রাসেলের গোলরক্ষক রানাকে পরাস্ত করলেও সাইডবারে লেগে ফিরে আসে। ২৬ মিনিটে সমতা আনে শেখ রাসেল। ইকেচুকু কেনেথের ক্রসে ফাঁকায় দাঁড়ানো সুজন বিশ্বাস সমতা আনেন (১-১)। ৩৮ মিনিট খেলার বিপরীতে এগিয়ে যায় রাসেল। বক্সের মাথা থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোকে পরাস্ত করেন (২-১) দীপক। পিছিয়ে পড়ে খেলায় ফিরতে মরিয়া হয় কিংস। প্রথমার্ধে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে ২ গোল করে এগিয়ে যায় চ্যাম্পিয়নরা। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে প্লেসিং শটে সমতা আনেন রবসন (২-২)। পরের মিনিটে প্রায় ২৫ মিটার দূর থেকে ডান পায়ের মাটি কামড়ানো শটে ব্যবধান ৩-২ করেন মোরসালিন। দ্বিতীয়ার্ধে বসুন্ধরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেয়। ম্যাচের ৫০ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোল করেন ডরিয়েলটন (৪-২)। ৬৬ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ডরিয়েলটন (৫-২)। বিশ্বনাথ ঘোষের আড়াআড়ি ক্রসে বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার হ্যাটট্রিক করেন। ২ মিনিট পর গোল করে ব্যবধান ৩-৫ করেন ইকেচুকু কেনেথ। ৭৬ মিনিটে কর্নারে দারুণ এক হেডে ডরিয়েলটন ৬-৩ করেন। ৮৮ মিনিট ইকেচুকু ব্যবধান ৪-৬ করেন। দ্বিতীয়ার্ধে রেফারি ৬ মিনিট বাড়তি সময় দেন। কিন্তু আর গোল হয়নি।