বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরা ট্রাভেল পাসে আটকা

♦ হাইকমিশনে যোগাযোগ করেও মিলছে না সাড়া ♦ অনলাইনে যোগাযোগ হয় দলের সঙ্গে ♦ বই পড়ে ও ধর্মকর্মে কাটছে সময়

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরা ট্রাভেল পাসে আটকা

অনুপ্রবেশের মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং আদালত। কিন্তু বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ‘ট্রাভেল পাস’ না পাওয়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না প্রায় আট বছর ধরে শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ভারতের গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার বরাবর আবেদন করলেও এখনো সাড়া পাননি তিনি। হাইকমিশন থেকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ অর্থাৎ ‘ট্রাভেল পাস’ না পেলে দেশে ফেরা সম্ভব নয় বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন ভারতে অবস্থানরত সালাহউদ্দিন আহমেদ। বই পড়ে ও ধর্মকর্মে সময় কাটানোর পাশাপাশি টেলিফোনে দেশে অবস্থানরত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তিনি। দলের স্থায়ী কমিটির সভায় অনলাইনে (জুম অ্যাপসে) যুক্ত হয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ভারতের আদালত তাকে মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন। পাসপোর্ট না থাকায় এখন দেশে ফিরতে হলে প্রয়োজন ট্রাভেল ডকুমেন্ট (ট্রাভেল পাস)। এজন্য গত ৮ মে তিনি গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার বরাবর ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেছেন। পরে লোক পাঠিয়েও যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাইকমিশন থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাননি। ট্রাভেল পাস পেলেই তিনি দেশে ফিরতে চান।

অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতের মেঘালয় পুলিশের দায়ের করা মামলার রায়ে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালত থেকে খালাস পান বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ভারত সরকার। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলং জজ কোর্টের আপিল বিভাগও সালাহউদ্দিনকে ওই মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেন। একই সঙ্গে আদালত তাকে দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। সূত্র জানান, রায়ের পর সালাহউদ্দিনের আইনজীবী আদালত থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করেন। এরপর দেশে ফেরার জন্য ৮ মে গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার বরাবর ট্রাভেল পাস চেয়ে আবেদন করেন সালাহউদ্দিন। ট্রাভেল পাস দিতে দেরি হচ্ছে দেখে সালাহউদ্দিন সহকারী হাইকমিশনার অফিসে লোক পাঠান। তিনি জানান, তার প্রতিনিধি দিয়ে ট্রাভেল পাস ইস্যুর বিষয়ে সহকারী হাইকমিশনার অফিসে যোগাযোগ করান। কিন্তু এখন পর্যন্ত মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে তাকে কিছু জানানো হয়নি। ট্রাভেল পাস না পেলে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। শিলংয়ে অবসর সময় কীভাবে কাটছে- জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বই পড়ে ও ধর্মকর্মে সময় কাটছে। মামলা চলাকালে শিলংয়ের বাইরে যেতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখন সেই বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু ‘লিগ্যাল ডকুমেন্ট’ না থাকায় শিলংয়ের বাইরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান সালাহউদ্দিন।

দল ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় জানিয়ে সালাহউদ্দিন জানান, ফোনে দেশে অবস্থানরত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। অনেকে ফোন করে তার খোঁজখবর নেন। তিনিও প্রয়োজনবোধে ফোন দেন। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সভায় তিনি জুম অ্যাপসের মাধ্যমে অংশ নেন।

দেশে ফেরানোর ব্যাপারে দল কোনো ভূমিকা রাখছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দল থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।’ দলের নেতা-কর্মীরাও তার ফেরার অপেক্ষায় বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। সে সময় তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিখোঁজের পর তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে গেছে। নিখোঁজের ৬৩ দিন পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং গলফ ক্লাব মাঠ থেকে উদ্বাস্তু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। পরে তাকে ‘নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল সার্ভিসেস’ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে তাকে পাঠানো হয় জেলে। সালাহউদ্দিনের সঙ্গে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তার বিরুদ্ধে ‘ফরেনার্স অ্যাক্টে’ অনুপ্রবেশের মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। সেই মামলায় ২০১৫ সালের ২২ জুলাই শিলংয়ের আদালতে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। নিখোঁজের সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়। বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে সালাহউদ্দিন শুরু করেছিলেন কর্মজীবন। ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন। এরপর চাকরি ছেড়ে তিনি যোগ দেন রাজনীতিতে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো তিনি কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনবারের সাবেক এই সংসদ সদস্য বিএনপি সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদও সংসদ সদস্য ছিলেন।

সর্বশেষ খবর