যশোর শহর থেকে পশ্চিমে চৌগাছা উপজেলা সদর ছাড়িয়ে ৪০ কিলোমিটার গেলেই সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম দৌলতপুর। ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার কাছাকাছি রয়েছে এই গ্রামের একটি জনবসতি। ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে এই জনবসতি গড়ে ওঠে। গ্রামের এই অংশটিকে ওপর থেকে দেখলে আসলে একটি পাড়া বলেই মনে হয়। কিন্তু এর মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া অদৃশ্য এক সীমানারেখা পাড়াটিকে দুই ভাগ করে রেখেছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এই গ্রামেরই বড় একটি অংশ পড়ে বাংলাদেশের দৌলতপুর মৌজায়। আর সাতটি পরিবারের ঘরবাড়ি কেটে চলে যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাগদা থানার মামা-ভাগ্নে মৌজায়। নব্বই দশকে এই সীমান্তে ভারত যখন কাঁটাতারের বেড়া দেয়, ভারতীয় অংশে পড়া সেই সাতটি পরিবার কাঁটাতারের এপাশে থেকে যায়। তাতে ভৌগোলিকভাবে কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়ে যায় ভারতীয় পরিবারগুলো। তবে ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির মিল থাকায় তাদের কাছে এখন সে সমস্যা খুব একটা বড় বলে মনে হয় না। তখনকার সেই সাতটি পরিবার বেড়ে এখন ৪০-এ দাঁড়িয়েছে।
ভারতীয় পাড়াটি স্থানীয়ভাবে ইন্ডিয়ানপাড়া নামে পরিচিত। চিকন একটি মাটির রাস্তা দুই দেশের সীমানা কিছুটা স্পষ্ট করে বটে, তবে তাদের একসঙ্গে চলাফেরা, খেলাধুলা, মিলেমিশে বসবাসের ধরন দেখে বোঝা কঠিন, কোনটা ভারত আর কোনটা বাংলাদেশ কিংবা কারা ভারতীয় আর কারা বাংলাদেশি।

পাড়াটিতে একটিই মসজিদ, যা পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। সেখানে দুই পারের মানুষই জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। বাংলাদেশ অংশের ঈদগাহেই দুই ঈদের নামাজ আদায় করেন ভারতীয় পরিবারগুলোর সদস্যরা। বাংলাদেশ অংশে চায়ের দোকানে চা খেতে আসেন তারা, আড্ডা দেন। ছেলেমেয়েরা খেলাধুলাও করে একসঙ্গে। ভালো কিছু রান্না হলে দুই পারের বাসিন্দারা খাবার বিনিময় করেন। বিয়েশাদিসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে পরস্পরকে দাওয়াত দেন দুই পারের মানুষ। বিপদে-আপদে পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতাও করেন। সকাল ৭টার দিকে কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে দিলে ইন্ডিয়ান পাড়ার ভারতীয় নাগরিকরা ভারতের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বাজারঘাট, স্কুল-কলেজে যাওয়াসহ অন্যান্য কাজ করতে পারেন। কিন্তু রাতে জরুরি চিকিৎসা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশি  স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় তাদের। পাড়ার বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দা গৃহবধূ আকলিমা খাতুন বলেন, ‘দুই দেশের মানুষ আমরা আত্মীয়ের মতো থাকি। যা কিছু রান্না করি, লেনদেন করি। ওরা এপাশে বাজারঘাট করে। আমরাও কিছু কিনতে হলে ওদের বলি, ওরা এনে দেয়। বিপদে-আপদে আমরা ওদের খোঁজখবর নিই, ওরাও আসে।’ আকলিমা খাতুনের প্রতিবেশী নাহিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই। একসঙ্গে বসবাস করি।’ ইন্ডিয়ানপাড়ার বাসিন্দা জামাল মণ্ডল বলেন, ‘বাপ-দাদারাও এখানে ছিল, আমরাও আছি। এখন পরিবার ও বাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। সেই সময় থেকেই এই এক মসজিদেই (বাংলাদেশ অংশে) নামাজ-কালাম চলছে, সমস্যা হয়নি। মসজিদের কাজে আমরাও অংশগ্রহণ করি’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাগদা থানার হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গফফার মণ্ডল। ইন্ডিয়ানপাড়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। মসজিদে এসেছিলেন আসরের নামাজ পড়তে। বললেন, ‘আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে বাড়ির পাশে বাংলাদেশের মসজিদে নামাজ পড়লাম, অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে’। মসজিদের সামনেই কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আকতারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মসজিদের পাশেই আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার। দুই পাশের মানুষ এই মসজিদেই নামাজ পড়ে, কোনো সমস্যা হয় না।’ দৌলতপুরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোতা মিয়া বলেন, ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় এই পাড়াটি এভাবে ভাগ হয়ে যায়। প্রথমে সাত ঘর ছিল, এখন ৪০ ঘর হয়ে গেছে। সবাই মুসলমান। সে কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। জরুরি চিকিৎসা, বাজারঘাট সবই মিলেমিশে হয়। এক সময় তো ওদের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের দৌলতপুর প্রাইমারি স্কুলে পড়ত। এখন কড়াকড়ি হওয়ার কারণে ওরা ভারতের নওদাপাড়া স্কুলে পড়ে।’ সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান বলেন, ‘ওই স্থানে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের সঙ্গেই মসজিদ। তার পাশেই দুই দেশের মানুষের বসতি। তবে ওরা এপাশে আসে কি না, বা এরা ওপাশে যায় কি না, তা বলতে পারব না।’ এরকম একটি সীমান্তে বসবাস করতে দুই দেশের নাগরিকদের কারও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারলে তাদের জীবনযাত্রায় আরও কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আসতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় তাদের। পাড়ার বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দা গৃহবধূ আকলিমা খাতুন বলেন, ‘দুই দেশের মানুষ আমরা আত্মীয়ের মতো থাকি। যা কিছু রান্না করি, লেনদেন করি। ওরা এপাশে বাজারঘাট করে। আমরাও কিছু কিনতে হলে ওদের বলি, ওরা এনে দেয়। বিপদে-আপদে আমরা ওদের খোঁজখবর নিই, ওরাও আসে।’ আকলিমা খাতুনের প্রতিবেশী নাহিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই। একসঙ্গে বসবাস করি।’ ইন্ডিয়ানপাড়ার বাসিন্দা জামাল মণ্ডল বলেন, ‘বাপ-দাদারাও এখানে ছিল, আমরাও আছি। এখন পরিবার ও বাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। সেই সময় থেকেই এই এক মসজিদেই (বাংলাদেশ অংশে) নামাজ-কালাম চলছে, সমস্যা হয়নি। মসজিদের কাজে আমরাও অংশগ্রহণ করি’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাগদা থানার হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গফফার মণ্ডল। ইন্ডিয়ানপাড়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। মসজিদে এসেছিলেন আসরের নামাজ পড়তে। বললেন, ‘আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে বাড়ির পাশে বাংলাদেশের মসজিদে নামাজ পড়লাম, অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে’। মসজিদের সামনেই কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আকতারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মসজিদের পাশেই আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার। দুই পাশের মানুষ এই মসজিদেই নামাজ পড়ে, কোনো সমস্যা হয় না।’ দৌলতপুরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোতা মিয়া বলেন, ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় এই পাড়াটি এভাবে ভাগ হয়ে যায়। প্রথমে সাত ঘর ছিল, এখন ৪০ ঘর হয়ে গেছে। সবাই মুসলমান। সে কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। জরুরি চিকিৎসা, বাজারঘাট সবই মিলেমিশে হয়। এক সময় তো ওদের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের দৌলতপুর প্রাইমারি স্কুলে পড়ত। এখন কড়াকড়ি হওয়ার কারণে ওরা ভারতের নওদাপাড়া স্কুলে পড়ে।’ সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান বলেন, ‘ওই স্থানে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের সঙ্গেই মসজিদ। তার পাশেই দুই দেশের মানুষের বসতি। তবে ওরা এপাশে আসে কি না, বা এরা ওপাশে যায় কি না, তা বলতে পারব না।’ এরকম একটি সীমান্তে বসবাস করতে দুই দেশের নাগরিকদের কারও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারলে তাদের জীবনযাত্রায় আরও কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আসতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        