আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকা অচল করতে এলে বিএনপিকেই অচল করে দেবে ঢাকাবাসী। গতকাল বিকালে রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। কাদের বলেন, অক্টোবরে বিএনপি নাকি ঢাকা অচল করে দেবে। ঢাকা অচল করতে এলে ঢাকাবাসী বিএনপিকেই অচল করে দেবে। নিজেরাই অচল হয়ে যাবে। তারা (বিএনপি) রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে। বেশি লাফালাফি, নাচানাচি করতে এলে রাশিয়ার ইউরেনিয়াম মাথায় ঢেলে ঠান্ডা করে দেব। কিছু ফখরুলের মাথায়, কিছু গয়েশ্বরের মাথায়, কিছু মির্জা আব্বাসের মাথায় ঢালা হবে। ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করে দেব, ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করব না।
বিএনপি-জামায়াতের চলমান দেশবিরোধী ও নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল বের করা হয়। মিছিলটিতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন। রাজধানীর গাবতলী থেকে শ্যামলী পর্যন্ত মিছিলটি প্রদক্ষিণ করে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রমুখ। এ ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তৃতা করেন।
বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বেশি লাফালাফি করলে ভালো হবে না। অবস্থা খারাপ হবে।বিশ্ব সংকটে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ কষ্টে আছে। এই কষ্ট থাকবে না। শেখ হাসিনার ঘুম হারাম মানুষের কথা ভেবে। কীভাবে মানুষকে খাওয়াবে, পরাবে। জিনিসপত্রের দাম বেশি, কিন্তু একজন মানুষও না খেয়ে মরেনি। মানুষ বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, আওয়ামী লীগ বাঁচবে, মুক্তিযুদ্ধ বাঁচবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। জানুয়ারিতে ভোট হবে, ডিসেম্বরে সেমিফাইনাল, নভেম্বর কোয়ার্টার ফাইনাল। ভোট হবে, খেলা হবে হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে। খেলা হবে সারা বাংলায়, খেলা হবে সারা ঢাকায়, সারা চট্টগ্রামে, সারা বরিশালে, সারা রাজশাহীতে, সারা সিলেটে। হবে খেলা, খেলা হবে জোরে জোরে ফাউল করলে লাল কার্ড, ফাউল করলে হলুদ কার্ড।
মঞ্চে উপস্থিত ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ডেঙ্গু থামছে? মেয়র সাহেব নকল ওষুধ আনিয়েন না! ভালো ওষুধ আনেন। মানুষ অস্থির হয়ে গেছে। আপনি দৌড়াদৌড়ি করেন ভালো। ছোটাছুটি করেন ঠিক আছে। কিন্তু ঠিকমতো মশাকে আঘাত করেন। মানুষ বড় কষ্টে আছে। খাওয়ার কষ্ট থাকবে না। শেখ হাসিনার রাতের ঘুম হারাম মানুষের কথা চিন্তা করে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলতে চাই- যত গর্জে তত বর্ষে না। এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন বানচাল করতে কেউ বোমা মারতে এলে সেই হাত ভেঙে দেওয়া হবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সারা দেশে রক্তপাত ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঘরবাড়িতে থাকতে দেয়নি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। সেই বিএনপি-জামায়াত আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের উন্নয়ন মেনে নিতে পারছে না। দেশের শান্তি সমৃদ্ধিকে মেনে নিতে পারে না। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে আসবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা সতর্ক আছে। সতর্ক থাকবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে দেব না। আমরা সন্ত্রাস চাই না, জঙ্গিবাদীদের উত্থান চাই না। আমরা এ দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে রক্ষা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বিদেশের দালালি করে কোনো লাভ হবে না। ক্ষমতায় বসাবে দেশের জনগণ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। যে কোনো অবস্থা মোকাবিলার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় নেই ১৭ বছর। তারা এখন আন্দোলন করছে। বিদেশ থেকে পলাতক তারেক রহমান বলছেন, ‘যত টাকা লাগে, তত টাকা দেওয়া হবে’-তাদের আয়ের উৎস কী? ক্ষমতায় থাকতে তারা লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। সেই অর্থ এখন আন্দোলনে ব্যয় করছে। এই লুটপাটকারী, সন্ত্রাসী সংগঠনকে আর বাংলার মাটিতে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে আবারও বঙ্গবন্ধুকন্যাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে হবে।