হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এখন খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা, তাতে তাঁকে বাসায় নেওয়া যাবে না। এখানকার চিকিৎসকরা তাঁদের সাধ্যানুযায়ী যা করার করেছেন। এখন তাঁকে বিদেশে নিতেই হবে। এতে তাঁর জীবন রক্ষা হতে পারে। ৯ আগস্ট থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। গতকাল এ হাসপাতালেই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানাতে তাঁর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানেই অধ্যাপক সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়ার এখন যে শারীরিক অবস্থা, তাঁর লিভারে পানি জমেছে, সেই পানি ঝরছে। লিভার জীবাণু আক্রান্ত হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে তাঁকে বাইরে নেওয়া দরকার। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে আর বাসায় নেওয়ার মতো অবস্থা নেই বলে জানান এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে, এতদিন তাঁকে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছিল, এখন সেগুলোও কাজ করছে না। তাঁর জীবন ঝুঁকির মধ্যে আছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য দুই বছর আগেই তাঁকে দেশের বাইরে নেওয়া উচিত ছিল বলে জানান এফ এম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এখানকার চিকিৎসকদের আন্তরিক চিকিৎসায় তিনি এখনো বেঁচে আছেন। কিন্তু তাঁদের সীমাবদ্ধতা আছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ভালো চিকিৎসার এখনো সুযোগ আছে। সেটা দেশের বাইরে। খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিতেই হবে। তাঁকে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া দরকার। দেশের বাইরে এর ব্যবস্থা আছে। বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চটুকু করেছে। তাদের আর কিছু করার নেই। এখন বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে তাঁকে বাইরে নিতে হবে।’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘টিপস’ নামের একটি প্রক্রিয়া দ্রুত দরকার বলে জানান অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এ প্রসিডিউরটা করলে ওনার পেটে যে পানি আসছে, এটা চলে যাবে, রক্তপাত হবে না। এটা হলো জীবন রক্ষাকারী প্রক্রিয়া। এটা বাংলাদেশে করা হয় না। এটা বিদেশে উন্নত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে করতে হবে। ডা. সিদ্দিকী বলেন, ওনার যে রোগ হয়েছে, সেটি সিরোসিসজনিত পোর্টাল হাইপারটেনশন। এর মানে হচ্ছে ভিতরে যতগুলো শিরা আছে, সেগুলো হাইপ্রেশারে আছে। যেহেতু হাইপ্রেশারে আছে, সেখান থেকে ফ্লুইড আকারে পানি নিঃসরণ হচ্ছে। সেই পানি অনবরত পেটের মধ্যে পড়তে থাকে এবং জমে পেট ফুলে যায়। পেট থেকে এ পানি ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়ে। এ পানিতে আবার ইনফেকশন হয়ে গেছে। সাময়িকভাবে এ পানি অপসারণ করা হচ্ছে। তবে টিপস প্রসিডিউরটা করলে তবে পেটে পানি জমা হতো না। চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম মহসীন বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) খাদ্যনালি, পাকস্থলী থেকে রক্তপাত হচ্ছে। পেটে, বুকে পানি জমে ইনফেকশন হয়ে জটিল অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাঁর এখন মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। আমাদের কাছে এ মুহূর্তে দেশে তাঁর চিকিৎসা দেওয়ার মতো কিছু নেই। একটাই করার আছে পেটে ও বুকে পানি জমা হলে সেটি বের করা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয় তাঁকে। এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছে সরকার। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাঁর মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।