রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাগর-রুনি হত্যা

এক যুগেও শেষ হয়নি ৪৮ ঘণ্টা

মাহবুব মমতাজী

এক যুগেও শেষ হয়নি ৪৮ ঘণ্টা

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ৪৮ ঘণ্টায় শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর এক যুগ পার হলেও শেষ হয়নি মামলার তদন্ত। একাধিক সংস্থার হাত বদলেও দাখিল হয়নি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ইতোমধ্যে আদালত থেকে ১০৫ বার সময় নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এদিন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন তারিখ ধার্য করেছেন। জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাই কোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে একই বছর ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে প্রায় একই রকম অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুজন অপরিচিত ব্যক্তি জড়িত ছিল। সাগরের হাতে বাঁধা চাদর এবং রুনির টি-শার্টে ওই দুই ব্যক্তির ডিএনএর প্রমাণ মিলেছে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ল্যাব যথাক্রমে ইনডিপেন্ডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিস এবং প্যারাবন স্ন্যাপশট ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আশাব্যঞ্জক কোনো কিছু পায়নি র‌্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ প্রতিবেদককে বলেন, মূলত এ মামলার তদন্ত অন্য সংস্থা করছিল। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাবকে দেওয়া হয়। তদন্তে আমাদের দুটি লক্ষ্য ছিল, এক- প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করা এবং দুই- হত্যার মোটিভ কী ছিল তা বের করা। এখনো আমাদের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ হয়নি। এখন আমাদের হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহের কাজ চলমান আছে। যখন হত্যাকাণ্ডটি ঘটে সে সময় আমাদের দেশে ফরেনসিক আলামত সংগ্রহ কিংবা ডিএনএ পরীক্ষার প্রযুক্তি ছিল না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সেখান থেকে আশাব্যঞ্জক কোনো তথ্যও পায়নি এবং তারা দিতে পারবে বলেও কোনো কিছু জানায়নি। দীর্ঘ এ সময়েও তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন সাগর-রুনির স্বজনরা। তাদের ভাষ্য, মামলার তারিখ আসে আর যায়। কোনো কাজ হয় না। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এটি কারা ঘটিয়েছে তা বের করতে হবে। আর এটি বের করতেই তদন্তে হয়তো এত সময় লাগছে। তবে দ্রুত এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া উচিত। যদি র‌্যাব না পারে, তাহলে অন্য সংস্থাকে এটি দেওয়া দরকার। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পরিদর্শক রবিউল আলমের ওপর। দুই মাস পর হাই কোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাবকে। সেই থেকে এক যুগও সংস্থাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। আদালত সূত্র জানায়, গত সাড়ে ১১ বছরে আদালতে জমা দেওয়া র‌্যাবের ১০টি অগ্রগতি প্রতিবেদনে সাগর-রুনির বাসা থেকে জব্দ করা আলামতের ডিএনএ পর্যালোচনায় অজ্ঞাত দুই পুরুষের উপস্থিতির তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে দুজন জামিনে, বাকি ছয়জন কারাগারে। র‌্যাবের চার কর্মকর্তাসহ ছয় কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেছেন। এদিকে প্রতিবারের ন্যায় সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। এর মধ্যে আজ ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর