বুধবার, ৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
লোকসভা নির্বাচন

বোমা মারধর সহিংসতা পশ্চিমবঙ্গে

কলকাতা প্রতিনিধি

বিক্ষিপ্ত সহিংসতায় গতকাল শেষ হলো ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ। এ দফায় ভোট নেওয়া হয় ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মোট ৯৩টি কেন্দ্রে।

মোট সাত দফায় দেশটির ৫৪৩টি লোকসভা আসনে ভোট হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথম তিন দফার ভোটের মধ্য দিয়েই অর্ধেকের বেশি আসন অর্থাৎ ২৮৩ আসনে ভোট নেওয়া সম্পন্ন হলো। বাকি থাকবে আরও চার দফা। চতুর্থ দফার ভোট নেওয়া হবে ১৩ মে, পঞ্চম দফা ২০ মে, ষষ্ঠ দফা ২৬ মে এবং সপ্তম ও শেষ দফার ভোট ১ জুন। গণনা আগামী ৪ জুন। তৃতীয় দফায় এদিন ভোট নেওয়া হয় গুজরাট (২৫), কর্ণাটক (১৪), মহারাষ্ট্র (১১), উত্তরপ্রদেশ (১০), মধ্যপ্রদেশ (৯), ছত্তিশগড় (৭), বিহার (৫), আসাম (৪), পশ্চিমবঙ্গ (৪), গোয়া (২), দাদরা এবং নগর হাভেলি, দমন এবং ডিউ (২) আসনে।

পশ্চিমবঙ্গে গতকাল লোকসভার চারটি আসনের নির্বাচন হয়। বড় কোনো গন্ডগোল বা সহিংসতার খবর না ঘটলেও ছোটখাটো দুই-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। জঙ্গিপুর আসনের একটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা গৌতম ঘোষের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ। অভিযোগ ওঠে, বিজেপি প্রার্থী ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। ধনঞ্জয়ের পাল্টা অভিযোগ, তার দলের পোলিং এজেন্টকে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর সেই খবর পেয়ে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে যান তিনি। একসময় দুজনই একে অন্যের দিকে তেড়ে গেলে নিরাপত্তা রক্ষীরা তাদের সরিয়ে দেন। মুর্শিদাবাদ আসনের রানীনগরে বুথের বাইরে সিপিআইএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমকে ঘিরে তৃণমূলের কর্মীরা গো ব্যাক স্লোগান দেয়। গোপীনাথপুরে ভুয়া এজেন্ট ধরেন সিপিআইএম প্রার্থী। ডোমকলের ঘোড়ামারায় বিরোধী ভোটারদের বুথে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ। রানীনগরের মরিচা-নিচুপাড়ায় ১৬৮ নম্বর বুথে তৃণমূল কর্মীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে কংগ্রেস-বাম জোটের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়। উত্তর মালদহের রতুয়ার রামপুর এলাকায় এটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে বোমাবাজি হলেও কেউ হতাহত হয়নি। পাশাপাশি একাধিক জায়গায় ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন জেলা নির্বাচনি কর্মকর্তার কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করে।

গুজরাটের গান্ধীনগরে একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে বিজেপির প্রতীক পদ্মফুল লাগানো কলম ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যটির কংগ্রেস সভাপতি শক্তিসিং গোহিল। তিনি বলেন, বিজেপি হেরে যাবে বলেই এ ধরনের অনৈতিক পদ্ধতি অবলম্বনে করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গতকাল পুরুলিয়ায় নির্বাচনি প্রচারণা সভায় বক্তৃতাকালে বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রচারের ফাঁকে কয়েক মুহূর্তের জন্য নিজের বক্তব্য থামিয়ে মোবাইলের মেসেজে চোখ বুলান। এর পরই তিনি বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমি এখনই জানতে পারলাম। সেখানে ভোট দিতে যাওয়া একজনকে পিটিয়ে রোদ্দুরে ফেলে রাখা হয়েছে।’ নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে মমতার বক্তব্য ‘আপনারা কি ভাবছেন এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন বিজেপির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে? আসলে ‘মডেল কোড অব কন্ডাক্ট’ এখন ‘মোদি কোড অব কন্ডাক্টে’ পরিণত হয়েছে। ওরা যা খুশি তাই করছে।’

গতকাল ১ হাজার ৩৫১ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো গুজরাটের গান্ধীনগর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ছাড়াও অন্যদের মধ্যে ছিলেন গুনা আসনে বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, মধ্যপ্রদেশের বিদিশা আসনে বিজেপি প্রার্থী ও রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, পোরবন্দর আসনে বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্ডব্য, মইনপুরী আসনে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী ও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের স্ত্রী ডিম্পল যাদব, আসামের ধুবড়ি কেন্দ্রে ‘অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ (অওটউঋ) সভাপতি বদরুদ্দীন আজমল, ধারওয়ার কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের আহমেদাবাদের রানিপ এলাকায় নিশান পাবলিক স্কুলে ভোট দেন।

প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে ভোট কেন্দ্রের বাইরে অনেক মানুষ অপেক্ষা করতে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। একসময় একটি ছোট্ট শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে মোদি নাচাতে থাকলে উৎসাহী জনতা হাততালি দেয়। এদিকে প্রচ দাবদাহের কারণে উপস্থিত সবাইকে বেশি পরিমাণে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বেশি পানি খেলে শরীর সুস্থ থাকবে, এনার্জিও পাওয়া যাবে।’

আহমেদাবাদে ভোট দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, মহারাষ্ট্রের লাতুরে ভোট দেন অভিনেতা রীতেশ দেশমুখ ও তার স্ত্রী অভিনেত্রী জেনেলিয়া ডিসুজা, মধ্যপ্রদেশের সেহোরে ভোট দেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিদিশা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শিবরাজ সিং চৌহান, কর্ণাটকের কালাবুর্গী এলাকায় ভোট দেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, ভোট দেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাবন্ত, আহমেদাবাদে ভোট দিতে দেখা যায় আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি গৌতম আদানিকেও।

সর্বশেষ খবর