অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হচ্ছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত রাতে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের উপস্থিতিতে সম্মিলিত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাতে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব (সচিব) মো. জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈঠকে শুধু ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি উপদেষ্টাদের পদগুলো পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে। এর আগে বিকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
গত সন্ধ্যায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসানসহ উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন। সন্ধ্যা ৬টার কিছুক্ষণ পরই সেনাবাহিনীর একটি কোস্টার বাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ জন সমন্বয়কসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন বঙ্গভবনে আসেন। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। বৈঠক শেষে রাত ১২টায় বঙ্গভবন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বেরিয়ে আসেন। আর তিন বাহিনীর প্রধানরা রাত ১২টা ১০ মিনিটে বঙ্গভবন ত্যাগ করেন।
বঙ্গভবনে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রনেতারা
বঙ্গভবনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি ও সম্মানিত দুই শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীনকে নিয়ে বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছাত্র-নাগরিক ও গণ অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষ থেকে একটি সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব করা হয়েছে। সেটিকেই চূড়ান্ত হিসেবে নেওয়া হবে। সেই নিশ্চয়তা আজকে বঙ্গভবন থেকে পেয়েছি। আমরা প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সর্বজনগ্রহণযোগ্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। এবং রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছেন তাঁকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়ে এসেছি। ১০ থেকে ১৫ জনের প্রাথমিক তালিকা দিয়েছি। এখানে নাগরিক সমাজসহ ছাত্র প্রতিনিধিরা রয়েছেন। ছাত্র প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে এ তালিকা চূড়ান্ত হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করা হবে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, তিন বাহিনীর প্রধান ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনী প্রধান অভ্যুত্থানকারী ছাত্র নাগরিকদের সম্মান জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সহিংসতা ও চলমান অরাজকতার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সবার প্রতি আহ্বান জানায়, অভ্যুত্থানকারী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তাবিত সরকারই দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। জনগণকে এ বিষয়ে আস্থা রাখতে হবে। সবাইকে সরকারি স্থাপনা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে হবে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত পুনর্গঠনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। ছাত্র নাগরিকরা ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও মন্দিরের নিরাপত্তাবিধানে যে ভূমিকা নিয়েছেন তার প্রশংসা বৈঠকে সবাই করেছেন। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্বরূপে ফেরত না আসা পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নাশকতা ও লুটপাট প্রতিরোধে ছাত্র-জনতাকে পাহারা দিতে হবে। ছাত্র-জনতা সবাই মিলে নতুন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা পাবেন জানান নাহিদ। তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসের একটি মাইনর অপারেশন হয়েছে। তিনি দ্রুতই দেশে চলে আসবেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত তালিকা এখনই প্রকাশ করছি না, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। একটি বিশেষ মুহূর্তে এ সরকার গঠন করতে যাচ্ছি। বিশেষ মুহূর্তে এ সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে এ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার সাংবিধানিক রীতি আছে। এ ক্ষেত্রে সেটাই অনুসরণ করা হবে। এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের ছাত্র-জনতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে চূড়ান্ত করেছেন। রাষ্ট্রপতিও তাতে সম্মতি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ছাত্র প্রতিনিধিদের আলোচনার দক্ষতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান শুধু অভ্যুত্থানের নেতা পাইনি, রাষ্ট্র গঠনের নেতাও পেয়ে গেছি। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানগণ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি ছাত্রনেতাদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন।
পরে রাতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়ক। বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সংকট উত্তরণে যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা জরুরি। উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যান্য সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরামর্শ দেন। সংকট উত্তরণে দেশবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ জন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত সোমবার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে নতুন সরকারের অপেক্ষায় আছে পুরো দেশ। মূলত প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরই এ অপেক্ষার শুরু হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গভবনে বিভিন্ন দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েক দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। গতকাল বিকালে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে অনেকে মুক্তি পেয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদসহ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকাল থেকেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বঙ্গভবনে অবস্থান করছিলেন। এরপর মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ একাধিক সচিবও বঙ্গভবনে যান। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানান, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ থেকে কাজের আনুষ্ঠানিকতা, শপথের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম তৈরি করা হয়েছে। কারা কারা অন্তর্বর্তী সরকারে আসবেন সে নাম চূড়ান্ত হলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাড়ি পাঠানো হবে।
বঙ্গভবন ও মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সূত্র জানান, নতুন অন্তর্বর্তী যে সরকার হতে যাচ্ছে এটি বুধ বা বৃহস্পতিবারের মধ্যেই হবে। তবে এখনো নামগুলো চূড়ান্ত হয়নি। সূত্রগুলো জানান, এ নিয়ে রাষ্ট্রপতি সবার সঙ্গে আলোচনা করছেন, যাতে একটি সুন্দর গ্রহণযোগ্য সরকার হয়। ইতোমধ্যে সোমবারের দিনের বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল সংসদ বিলুপ্ত করা, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেওয়া। এ তিনটি সিদ্ধান্তই কার্যকর করা হয়েছে।
গত সোমবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন বিকালে সেনা সদর দপ্তর থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। এর পর থেকেই এ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চেয়ে সরকার গঠনের রূপরেখা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ওই সময় বলেছেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সর্বজনগ্রহণযোগ্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘তিনি ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে এ গুরুদায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন। আমরা সকালের মধ্যেই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চাই।’
নাহিদ আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার প্রস্তাব ছাড়া কোনো ধরনের সরকার মেনে নেওয়া হবে না। আমরা আগেও বলেছি, সেনাশাসিত সরকার অথবা সেনাসমর্থিত সরকার অথবা ফ্যাসিস্টদের দোসরদের কোনো বি-টিম সরকার, কোনো গণবিরোধী সরকার মেনে নেওয়া হবে না।’ সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার কথা বলেন তিনি।
জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে ফ্রান্সের প্যারিসে আছেন। তবে শিগগিরই ঢাকা ফিরবেন। এ নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম আলোচনায় আসার পর সে প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস। তিনি আরও বলেছেন, ‘যে শিক্ষার্থীরা এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁরা যখন এ কঠিন সময়ে আমাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন, আমি কীভাবে তা প্রত্যাখ্যান করি?’
গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছেন। দেশে এখন কোনো সরকার নেই। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই-২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় সরকার গঠনের ব্যাপারে সমাধান করতে হবে। তাই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অনুরোধ করব অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের। অন্যথায় দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে।’
আন্দোলনকারী ছাত্ররা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে চান, আপনারা সমর্থন করেন কি না-জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার নয়। যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের নামের জন্য, আমরা সেই সময় রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব। এখানে এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট। উনি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রধান। তাঁরই একমাত্র এখতিয়ার আছে এ ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেওয়ার। সুতরাং যখন রাষ্ট্রপতি আমাদের ডাকবেন, তখনই আমাদের নামের প্রস্তাব আমরা দেব। তবে একটা কথা বলে দিই-ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা তাঁদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাঁদের সঙ্গে একাত্মবোধ করছি। এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
এদিকে গতকাল রাজধানীর মগবাজারের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির আমির ডা. মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্ররা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারা করতেই পারে। তাদের আমরা অত্যন্ত গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে ধারণ করি। যদি জাতি একটা সুস্থ রাস্তায় ওঠে, এটা হবে তাদের ত্যাগের ফসল।’ এর আগে গত ৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।