ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল ঢামেক হাসপাতালের অফিস সহায়ক আমির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষকসহ তিন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন- বিইউবিটির শিক্ষক শাহরিয়ার অর্ণব, শিক্ষার্থী পলজয়, সহাব তুর্জ ও সাইমি নাজ শয়ন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার ওসি এ কে এম সাহাবুদ্দিন শাহীন। এদিকে গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় ঢামেক হাসপাতালে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সিসিটিভি দেখে ব্যবস্থা-উপদেষ্টা : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
গতকাল বিকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসে দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের ওপর হামলায় দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আইনি ব্যবস্থা নিতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। তবে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে চিকিৎসকদেরও উচিত শাটডাউন কর্মসূচি উঠিয়ে নেওয়া। দুটি তদন্ত কমিটির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, যারা অভিযোগ করেছেন চিকিৎসা ঠিকমতো হয়নি তাদের জন্য একটা তদন্ত কমিটি করেছি। যারা ডাক্তারদের গায়ে হাত তুলেছে, সেটা দেখার জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ছাত্র মারা যায়। যে কোনো মৃত্যু মানুষের জন্য সত্যি সত্যি পীড়াদায়ক, ডাক্তাররা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি, কারণ তার মাথায় বড় আঘাত ছিল। ছাত্রটি মারা যাওয়ার পর তার আত্মীয়স্বজন সেখানে গন্ডগোল শুরু করেন। হাসপাতালের পরিচালক তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন- এখানে আমাদের গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। তারা এই কথায় কর্ণপাত না করে আমাদের ডাক্তারদের ওপর হাত তোলে। এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি, এটা অন্যায়।
এরপর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। কিন্তু অন্য গ্রুপ তার চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়। পরে সেও মারা যায়। এরপর বিষ খাওয়া রোগী প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় পরে সোহরাওয়ার্দীতে মারা যান।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘মৃত্যুর তিনটি ঘটনাই দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে, সেবা দিয়েছেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না কভিডের সময় ডাক্তাররা দিন নেই, রাত নেই, সেবা করে গেছেন। এখন যে বন্যা দেখা দিয়েছে সেখানেও ডাক্তাররা দিনরাত খেটে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কথায় কথায় তাদের গায়ে হাত তোলা- কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ নুরজাহান বেগম বলেন, ‘যারা গায়ে হাত তোলার কাজটি করেছে, আমি তার নিন্দা জানাই। আমি আমার সব ডাক্তারকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, নিশ্চয়ই সিসিটিভি ফুটেজে এগুলো আছে, সেই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমি তাদের আইনের আওতায় আনব- এটা আমার অঙ্গীকার। আন্দোলনরত ডাক্তাররা আমাদের সন্তানের মতো। তাদের প্রতি মানবিক হোন। ডাক্তারদের প্রতি আমি আহ্বান জানাব শাটডাউন তুলে নাও। মানুষের সেবায় এসেছ, মানুষের সেবায় ফিরে যাও।’ স্বাস্থ্য সিনিয়র সচিব আকমল হোসেন আজাদ বলেন, ‘এই ঘটনা তদন্ত যে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদেরকে শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন কর্ম দিবসের মধ্যেই তারা রিপোর্ট দেবেন। এই রিপোর্ট হিমাগারে যাবে না। কমিটির সুপারিশ দেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এরই মধ্যে মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি। দায়ীকে অবশ্যই পুলিশ গ্রেপ্তার করবে বলেও জানান তিনি।