শুক্রবার জুমার নামাজের আগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের বর্তমান ও সাবেক দুই খতিবের দ্বন্দ্বে তাদের অনুসারীরা তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছেন। এ সময় মসজিদে নামাজ পড়তে আসা সাধারণ মুসল্লিরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। দুই খতিবের অনুসারীদের মসজিদের জুতার বাক্স থেকে পরস্পরের দিকে জুতা ছুড়ে মারতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি ও মসজিদের দরজা-জানালা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত বায়তুল মোকাররম মসজিদে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
জানা যায়, শুক্রবার নামাজের আগে বায়তুল মোকাররম মসজিদের বর্তমান খতিব মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান বয়ান করছিলেন। এমন সময় মসজিদের আগের বা পুরনো খতিব মুফতি রুহুল আমিন তার অনুসারীদের নিয়ে মসজিদে ঢুকে বয়ানরত খতিবের মাইক্রোফোনে হাত দেন। ফলে ঝামেলা বেধে যায়। এদিকে মুফতি রুহুল আমিন দাবি করেন তিনি খতিব হিসেবে বহাল আছেন। সরকার তাকে অপসারণ করেননি। তাই তিনি যথারীতি মসজিদে এসে বয়ান শুরু করেন। তবে বয়ানের এক পর্যায়ে বর্তমান খতিবের অনুসারীরা প্রতিবাদ করেন। এরপর দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি বেধে যায়। এ সময় দুই খতিবের অনুসারীদেরকে মসজিদের জুতার বাক্স থেকে পরস্পরের দিকে জুতা ছুড়ে মারতেও দেখা যায়। একপর্যায়ে অনেককে মসজিদের দরজা-জানালা ভাঙচুর করতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে নামাজ পড়তে আসা সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে এসব তুলকালাম কান্ড ঘটে। খবর পেয়ে দ্রুত বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে সাবেক খতিব মুফতি রুহুল আমিন মসজিদ ছেড়ে চলে যান। সোয়া ১টার দিকে পরিবেশ শান্ত হলে মসজিদে মুসল্লিরা জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। তবে নামাজ শেষে মুসল্লিরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় এক খতিবের অনুসারীরা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় অবস্থানের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। গতকাল মসজিদের বাইরে আগে থেকেই পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। এদিকে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়ানোকে কেন্দ্র করে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে সেটাকে ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন খতিব মুফতি রুহুল আমিন। তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, তিনি এখনো অফিশিয়ালি বায়তুল মোকাররমের খতিব। সরকার তার নিয়োগ বাতিল করেনি। অসুস্থতার কারণে কয়েক সপ্তাহ আসতে পারেননি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত ছুটিও নিয়েছেন। ছুটি শেষ হওয়ায় তিনি শুক্রবার নামাজ পড়াতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থতার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবগত। এমনকি তিনি লিখিতভাবে ছুটিও নিয়েছেন। তার ছুটি শেষ হয়েছে ১৩ সেপ্টেম্বর। এমতাবস্থায় নিয়ম অনুযায়ী জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য মসজিদে আসি। মসজিদে আসার পর মুসল্লি কমিটির পরিচয়ে তিন ব্যক্তি তাকে বলেন, আপনি নামাজ পড়াবেন না। জবাবে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে নামাজ না পড়াতে বললে চলে যাব। এরপর মুফতি রুহুল আমিন নামাজের জন্য বয়ান শুরু করেন এবং প্রায় ২০ মিনিট বয়ানও করেন। এ সময় মসজিদের বাহির থেকে কিছু লোক এসে হট্টগোল শুরু করে এবং মসজিদে ভাঙচুর চালায়। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় নামাজ না পড়িয়ে তিনি মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান। এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে খতিবের নামাজ পড়ানো না পড়ানোর বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না থাকায় এই বিশৃঙ্খলা হয়েছে বলে মনে করছেন মুফতি রুহুল আমিনের সমর্থকরা। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন মসজিদে অনুপস্থিত ছিলেন। এ সময় ওয়ালিউর রহমান খান মসজিদে জুমার নামাজে খতিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন।