শহীদ নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল দিনভর ছাত্র-জনতার দখলে ছিল রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ’-এর ব্যানারে গণজমায়েত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় কয়েকজনকে আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন তারা। অর্ধশতাধিক লোককে আটক করা হয়েছে বলে জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সকাল থেকেই গুলিস্তানে জিরো পয়েন্টে আসতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। গুলিস্তান থেকে স্টেডিয়াম যাওয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। তবে অন্যান্য রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এদিকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান নেন বিএনপি-যুবদল-মহিলা দলসহ দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ভাসানী অনুসারী পরিষদের পক্ষে সংগঠনের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু নেতা-কর্মীদের নিয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জিরো পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে জলকামান ও রায়ট কার রাখা হয়। বিজিবি সদস্যদের গাড়ি নিয়ে পুরো এলাকা টহল দিতে দেখা গেছে। জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শহীদ নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। এর আগে সকাল থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। আধা ঘণ্টা পর পর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নূর হোসেন চত্বর ঘুরে আবার ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এসে জড়ো হন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় সেখানে আসা কয়েকজনকে আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে মারধর করা হয়। মারধরের পর তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।
এদিকে ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বিকালে গুলিস্তান বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে একটি মিছিল বের করা হয়। নগর ভবনের সামনে থেকে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের পাশের গলি থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। তবে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় তারা জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে পারেননি। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ঢাবি ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মীদের আচরণ সংযত রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা ছাত্রদলের ইমেজকে সংকটে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেই ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের গণজমায়েতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুুল্লাহ বলেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যত দিন পর্যন্ত বিচার নিশ্চিত না হয়, তত দিন পর্যন্ত তাদের প্রকাশ্যে আসার কোনো অধিকার নেই। হিন্দুস্তানে বসে হুংকার দেবেন আর গুলিস্তানে সংঘর্ষ করবেন। সেই সুযোগ বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আপনাদের আর দেবে না। ’২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ প্রাসঙ্গিক কী প্রাসঙ্গিক না সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে ৫ আগস্ট। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নাৎসি বাহিনীর থেকেও বেশি নৃশংস। আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা থেকে আওয়ামী লীগের নৃশংসতা আমরা দেখেছি পিলখানা হত্যাকান্ডে, শাপলা চত্বরে। আলেম সমাজের ওপর আওয়ামী লীগের নৃশংসতা দেখেছি। বিএনপি, জামায়াতসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে গত ১৬ বছর গুম, হত্যা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ করে হাসনাত আরও বলেন, ‘প্লিজ, আপার অনুসারী যারা আছেন, তারা একটা মিনিটের জন্য হলেও রাস্তায় নামেন। দেখা না হলে তো কথা হবে, তাই না। আপনাদের সঙ্গে আমরা একটু দেখা করতে চাই, কথা বলতে চাই। দেশের প্রত্যেকটি মানুষ আপনাদের একটু দেখতে চায়। আপনারা কোথায়? আপনাদের সঙ্গে নাকি দেশের জনগণ আছে। যদি জনগণ থাকে, তাহলে আপনাদের নেত্রী বিদেশে কেন পালিয়ে গেল? আপনারা সবাই পালালেন কেন? মূর্খের দল কিছুই বোঝে না। ওদের কোনো আত্মমর্যাদা নেই। ছাত্রলীগ, যুবলীগের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আমরা ম্যাচ খেলব শুধু ছাত্রলীগের সঙ্গে, যুবলীগের সঙ্গে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে।’ আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে ক্ষমতাপিপাসুরা। আমাদের প্রায় অর্ধ লাখ ভাইবোনদের আহত করেছে। ওই ২৪ দিনে কীভাবে আপনাদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, তা শুধু আপনাদের স্মৃতিতে থাকলে হবে না। আপনাদের স্মৃতিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।’