স্বৈরাচারী হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিহতের ঘোষণা আগেই দেওয়া ছিল। শনিবার রাত থেকেই ছাত্র-জনতার দখলে ছিল গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের শহীদ নূর হোসেন চত্বর। এরই মধ্যে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে শহীদ নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী। ২০-২৫ জনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি ব্যবহার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নব্বইয়ের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ নূর হোসেন এই দিনে মারা যান। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল শহীদ নূর হোসেন দিবসটি পালন করে আসছে। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অন্তত ২০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে মারধর করে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্র-জনতা। এ সময় কিছু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নূর হোসেন চত্বরে আসার চেষ্টা করে। প্রথমে দুজন নারীকে আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পরে তাদের পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাছিরুল আমিন বলেন, ‘কিছু লোক আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিল। ছাত্র-জনতা তাদের ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল সকালে দুজন নারীকে আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে হেনস্তা করা হয়। পরে তাদের পুলিশে তুলে দেওয়া হয়। ওই দুই নারীর পরিচয় জানা যায়নি। দুপুর ১২টার দিকে এক বৃদ্ধ আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এসে হঠাৎ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। তিনি বলতে থাকেন, ‘দেশে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে গেছে। দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা যাওয়ার পর দেশ শেষ হয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ, শেখ হাসিনা চলে আসবেন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা- একথা বলছি।’ এ সময় সেখানে অবস্থান করা বিএনপি-যুবদলসহ ছাত্র-জনতা তাকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তবে গণপিটুনির সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এ ছাড়াও সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যাকেই সন্দেহ হয়েছে, তার ফোন চেক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক-কর্মী সন্দেহ হলেই গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়েছে। জিরো পয়েন্টে আসা কমপক্ষে ২০-২৫ জন কর্মী-সমর্থককে মারপিট করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপের নির্দেশনা বাস্তবায়নকারীসহ ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ‘কুচক্রী মহলের’ ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ উসকানিমূলক পোস্টার, ছবিসহ প্ল্যাকার্ড ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।
সাভারে আটক ৩০ : সাভারের আমিনবাজার এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল সকালে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার মফিদ-ই-আম স্কুলের সামনে শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করেন। ভোর থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার এলাকায় চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। ঢাকা জেলার এসপি মোহাম্মদ আহমেদ মুঈদ বলেন, সাভার ও আশুলিয়ায় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশ মুখে কেউ যেন কোনো নাশকতা করতে না পারে, সে লক্ষ্যে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়েছে।