বাংলাদেশের পরিবর্তনকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারছে না ভারত। ভারতের ভয় যে, তারা এতদিন যে সুবিধা বাংলাদেশের কাছ থেকে পেয়েছে তা আর তারা পাবে না। সে কারণেই এক ধরনের অপপ্রচার করে ভারত, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সরকারকে অকার্যকর দেখানোর একটি প্রবণতা তৈরি করছে। ভারতের দিক থেকে ভারতীয় সরকারকে এই ভুল তথ্য ও অপপ্রচার যেগুলো ছড়াচ্ছে তা কমিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
এই সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, এই ভুল তথ্য ও অপপ্রচার যেগুলো ছড়াচ্ছে তা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে উদ্যোগ ভারতকে নিতে হবে। এটা ভারত সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা তারা কীভাবে নেবেন তা নিজেরাই বিবেচনা করবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত দুই পক্ষেরই সামনে ফরেন অফিস কনসালটেন্ট নামে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা আগামী ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এই ফরেন অফিস কনসালটেন্টটি অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তাহলে দুই দেশের জন্যই পারস্পরিকভাবে তাদের কথা বলার সুযোগ তৈরি হবে। এতে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার তাপমাত্রাও নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
হুমায়ুন কবির আরও বলেন, বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। গত জুলাই-আগস্টে যে অভ্যুত্থান তা ছিল গণ অভ্যুত্থান। এতে শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, এখানে ব্যবস্থা পরিবর্তনেরও একটি দাবি বেশ জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কাজেই এর মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের চাহিদা ও প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়েছে এবং একে জনগণের ব্যাপক অংশ সমর্থন করছে। যেহেতু এটি একটি নতুন বাস্তবতা এবং এর আলোকে যে কোনো দেশই তার নিজস্ব চাহিদার ভিত্তিতে নিজের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে। আমরা দেখতেই পাচ্ছি এখানে একটি নতুন চাহিদা তৈরি হয়েছে এবং সেই আলোকেই বাংলাদেশ তার পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক কীভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা যায় এবং কীভাবে খাপ খাওয়ানো যায় এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিল। এখন ভারত যেহেতু বাংলাদেশের নিকটপ্রতিবেশী এবং দেশটির সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে এজন্য গত ১৫ বছর ভারত, বাংলাদেশের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের যে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে তা নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। চিন্তার কারণ হলো, ভারত গত ১৫ বছরে আমাদের এখানে অভ্যন্তরীণ এমন একটি ব্যবস্থাকে সমর্থন করছিল যে ব্যবস্থার প্রতি মানুষের সমর্থন টিকে থাকে বা মানুষ একে ভালোভাবে দেখে। কিন্তু যেহেতু মানুষ তা দেখেনি এবং আওয়ামী সরকারের পরিবর্তন হয়েছে, আমার ধারণা ভারত, বাংলাদেশের পরিবর্তনটিকে বুঝতে পারছে না। ভারত এই পরিবর্তনকে নিজেদের মতো করে দেখছে। একই সঙ্গে একটি অনিশ্চয়তার কারণে দেশটির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এমন বক্তব্য দিচ্ছেন যে, এই বক্তব্যগুলো বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আর এটি সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার কারণেই তারা সংখ্যালঘুর মতো ইস্যুকে তুলে আনছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিবর্তনের সময়ে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার মধ্যে কিছু অংশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরাও ছিল। যারা রাজনৈতিকভাবে আগের ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু একে ঢালাওভাবে ভারতীয় পত্রপত্রিকা, রাজনৈতিক দল এবং ভারতীয় সরকারের একটি অংশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা শুরু করেছে। অতিরঞ্জন করে বিষয়টিকে শুধু ভারত না, সারা পৃথিবীতে ছড়াচ্ছে। এর ফলে এক ধরনের জন উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। আর এই জনউত্তেজনার ফল হিসেবে কয়েকদিন আগে কলকাতা হাইকমিশনে দেখেছি ভারতীয় বিক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠী এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সম্প্রতি আগরতলাতেও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের উত্তেজনা যখন চালু থাকে তখন এই উত্তেজনার সাধারণ ফল হিসেবেই আগরতলায় গত সোমবার সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে দুভার্গ্যজনকভাবে হামলার ঘটনা ঘটে।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা কাউকে পছন্দ করি, কাউকে করি না। কিন্তু কোনো কূটনৈতিক জায়গা বা প্রতিষ্ঠানে যখন আপনি হামলা করেন তখন এটি আন্তর্জাতিক আইনের, ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় সারা পৃথিবী যে কূটনৈতিক কর্মকা পরিচালনা করে তার বরখেলাপ হয়ে যায়। সে কারণে দিল্লি নিজেও কিন্তু এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে দেশটি তাদের কয়েকজন পুলিশকে বরখাস্ত করেছে। কাউকে কাউকে বদলি করেছে।