কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন বলেছেন, এখনো ৭০০ বন্দি পলাতক রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের কারাগারগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় ৬৯টির মধ্যে ১৭টি অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সরকারও এ বিষয়ে জানে। গতকাল কারা সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। কারা মহাপরিদর্শক বলেন, বেশ কিছু কারাগার নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গণ অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমলেও এখন আবার ঊর্ধ্বমুখী।
বদলে যাচ্ছে লোগো : কারাগারের লোগো পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদপ্তর। বর্তমানে কারা অধিদপ্তরের লোগোতে নৌকা রয়েছে জানিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারা অধিদপ্তরের কর্মকান্ডের সঙ্গে যাতে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, লোগো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবে নয়, সাধারণ মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে লোগো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেড়েছে বন্দির সংখ্যা : কারা মহাপরিদর্শক বলেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় দেশের কয়েকটি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়। এই বন্দিদের মধ্যে ফাঁসির দন্ড পাওয়া আসামি ছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে। পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জন ফিরে আসে। বর্তমানে যে ৭০০ জন পলাতক আছে তাদের মধ্যে জঙ্গি, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত, শীর্ষ সন্ত্রাসীর মতো অতিঝুঁকিপূর্ণ ৭০ জন বন্দিও রয়েছে। বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে প্রায় ৪২ হাজার বন্দি ধারণক্ষমতার তথ্য তুলে ধরে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ৫ আগস্টের আগে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার ছিল। সরকার পরিবর্তনের পর জামিন হওয়ায় বন্দির সংখ্যা কমে প্রায় ৫৫ হাজারে আসে। এখন এ সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬৫ হাজারে ঠেকেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে মোতাহের হোসেন বলেন, সরকার পতনের পর জামিনে মুক্ত হওয়া আসামিদের মধ্যে ১৭৪ জন জঙ্গি ও ১১ শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে।
বর্তমান বন্দি ব্যবস্থাপনা : ব্রিগেডিয়ার মোতাহের বলেন, ‘কারাবন্দিদের খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি, অসুস্থ হলে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স সেবা, প্রতি এক মাসে তাদের আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়াসহ গত তিন মাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ ছাড়াও সকল প্রকার বিচারাধীন বন্দি প্রতি ১৫ দিনে এবং সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ৩০ দিনে, আইনজীবীসহ একবারে পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজন সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। এ ছাড়া প্রত্যেক বন্দিই প্রতি সাত দিনে একবার আইনজীবীসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনটি নম্বরে ১০ মিনিটের জন্য কথা বলার সুযোগ পান। শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দিরা দিনে দুই বেলা এবং অন্য সব বন্দি দিনে এক বেলা আমিষ জাতীয় খাবার পান। তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারের অভ্যন্তরে ক্যান্টিনে পণ্যের দাম ন্যায্যতার সঙ্গে নির্ধারণ করে ক্যান্টিন সুবিধা সবার জন্যই উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তবে ব্যক্তি বিশেষে মাসিক সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়ার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল হচ্ছে : কারাগারে আসা বন্দিদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলে কারাগারের বাইরে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। এতে নিরাপত্তার ঝুঁকি বেশি থাকে। অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে সব ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা রেখে কারা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক মোতাহের হোসেন। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল হলে বন্দি রোগীদের অন্য কোনো হাসপাতালে নিতে হবে না।
কারা কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারের ভিতরে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। বন্দি রোগীদের জটিল কোনো সমস্যা হলে বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের স্থানান্তর করা হয়ে থাকে।
কারা আইন সংস্কার হচ্ছে : কারা মহাপরিদর্শক জানান, অতি পুরনো কারা আইন ও বিধিবিধান সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণসহ কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জনবল বৃদ্ধি, পদ-পদবির আপগ্রেডেশন, নিয়োগবিধির পরিবর্তন- এসব বিষয় সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হচ্ছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও আইন পরিবর্তনের বিষয়টি রাখা হয়েছে।
কারাগারে ডগ স্কোয়াড : কারাগারে মাদকদ্রব্য প্রবেশ রোধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা রোধ করা সম্ভব না হওয়ায় এবার ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা অধিদপ্তর। এ প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সাংবাদিকের জানান কারা মহাপরিদর্শক।
২৪ ঘণ্টা হটলাইন : বন্দি ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কারাগার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সফটওয়্যার, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন-আরএফআইডি ও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম- জিপিএস ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক। তিনি জানান, সেবাপ্রত্যাশীদের সহায়তার জন্য ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদপ্তর।