৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১২:১৩

ডেঙ্গুজ্বর সারার পর করণীয়

ডেঙ্গুজ্বর সারার পর করণীয়

রোগ থেকে সেরে উঠার পর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে (অর্থাৎ অসুস্থতার আগে যেমনটা ছিল) ফিরে আসতে খানিকটা সময় লাগে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ সময়কে Convalescent period বলে। এ সময়ে ধীরে ধীরে শরীর এবং মন পুনর্গঠন হয়। যে কোনো রোগীর ক্ষেত্রেই এ সময়টুকু সাবধানের সঙ্গে মেনে চলা উচিত। এ সাবধানতা ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে খানিকটা বেশি হওয়া উচিত। Convalescent period-এর সময়কাল সপ্তাহখানেক ধরে চলে। অনেকের বেলায় মাসও লেগে যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের অন্য কোনো রোগ থাকে যেমন- ডায়বেটিস, কিডনি রোগ, শ্বাসের রোগ। তাদের বেলায় Convalescent period কিছু বেশি সময় ধরে চলে। যেহেতু Convalescent period-এ শরীর পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠে, তাই এ সময়ে কাজের চাপ তড়িঘড়ি করে পূর্ণ মাত্রায় বাড়ানো ঠিক হবে না। Don’t whip the tired horse. কাজের গতিকে ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। 

পর্যায়ক্রমে চলাফেরা শুরু করুন : প্রথমে বাড়িতে চলাফেরা করুন, তারপর বাড়ির আঙিনায় যান, বাজারে যান, অফিস আদালতে যান, অফিস আদালতে হালকা রুটিন ওয়ার্ক করুন। এভাবে সপ্তাহ দু-তিনেক কাটান। তারপর একটু পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হলে যার যে কাজ সে কাজ শুরু করুন।

স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া কীভাবে শুরু করবেন?
ডেঙ্গুর সময়টুকু আপনি তরল, নরম এবং সহজপাচ্য খাবারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। যে খাদ্যগুলোকে না বলা হয়েছে ওইগুলোকে এখনো না বলুন আর যেগুলোকে হ্যাঁ বলা হয়েছে সেগুলোকে এখনো হ্যাঁ বলুন। তবে এবার তরল, নরম এবং সহজপাচ্য খাবার থেকে উঠে আসুন। তরল খাবার আগের মতো বেশি না খেয়ে কমিয়ে ফেলুন। ফলমূল যেভাবে বেশি করে খেয়েছেন সেভাবে না খেয়ে স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ যেভাবে খায় সেভাবে খান। নরম খাবার যেমন জাউভাত না খেয়ে ভাত খান। তবে এ পর্যায়ে গুরুপাক না খেয়ে লঘুপাক খান। লঘুপাক হচ্ছে মসলা কম দিয়ে সহজে হজম হয় এমন খাবার। গুরুপাক হচ্ছে তেল মসলা বেশি দিয়ে সময়-সাপেক্ষে হজম হয় এমন খাবার যেমন- রোস্ট, বিরিয়ানি ইত্যাদি।

ব্যায়াম : ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠার পর সঙ্গে সঙ্গে প্রথম মাসে জিমে যাবেন না। আপনার যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে জিমে যাওয়ার অভ্যাস  থাকে তাহলে ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠার পর কিছু দিন জিম থেকে দূরে থাকুন। যদি নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকে তাহলে এ সময় ব্যায়াম করবেন না।

রাতে নিবিড় নিদ্রার প্রয়োজন : আপনার রাত জাগার অভ্যাস। ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠার পর এ অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটান। রাত দশটার পর আর জেগে থাকবেন না। শোয়ার ঘর ছিমছাম করে, বিছানাকে ছিমছাম করে, বাতি নিভিয়ে রাত দশটার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ুন। মনে রাখবেন দিনে কাজ করার মাঝে, জেগে থাকার মাঝে আমাদের শরীরের যে ক্ষতি হয় রাতে ঘুমানোর সঙ্গে সে ক্ষতি পূরন হয়। রাতের বেলায় ক্ষতি পূরনকারী কিছু হরমোন শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। যেমন ACTH, steroid, growth hormone ইত্যাদি। দিনের বেলায় জেগে থাকার ফলে যে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয় রাতে ঘুমানোর ফলে ওই বিষাক্ত পদার্থ নিঃশেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ পরিপূর্ণ নিবিড় ঘুমের মাধ্যমে ব্রেন সতেজ হয়, মন সতেজ হয়, শরীরও সতেজ হয় এবং ক্লান্তি দূর হয়।

দিনের বেলায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম : আপনি অন্য সময় দিনের বেলায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলেও ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠার পর দিনের বেলায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিবেন। দুপুরে খাওয়ার পরে ঘণ্টাখানেক ঘুমাবেন। এছাড়া দিনের অন্যান্য সময় ঘণ্টাখানেক পর পর ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে হাত-পা ছেড়ে শুয়ে থাকবেন অথবা অফিস আদালতে থাকলে ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাটান।

তাই ডেঙ্গুজ্বর সারার পর আমাদের যতেষ্ট যত্নবান হতে হবে। নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ।

অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধরী, মেডিসিন বিভাগ (পিআরএলরত), ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর