ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশী জেলার হরসিলের নিকটবর্তী ধারালি গ্রামে মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘভাঙা বৃষ্টির ঘটনা ঘটলে ভয়াবহ দুর্যোগের সৃষ্টি হয়। অতিবৃষ্টির কারণে খীরগঙ্গা নদীর পানি হু হু করে উপচে উঠে গ্রামে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই স্রোতের তোড়ে ভেসে যায় অনেক বাড়িঘর। বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাহাড়ি ঢাল বেয়ে গর্জন করতে করতে নিচে নেমে আসে জলপ্রবাহ। ভয়াবহ স্রোতের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ঘরবাড়িগুলি চোখের পলকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার করে আশেপাশের মানুষকে দ্রুত সরে যেতে অনুরোধ করছিলেন।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী জানান, রাজ্য সরকার জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ শুরু করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে এবং আশেপাশের গ্রামগুলোতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ক্লাউডবার্স্ট একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা পাহাড়ি এলাকায় প্রায়ই ঘটে থাকে। এটি হলো অতি স্বল্প সময়ে সীমিত এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়া। এক ঘণ্টায় ১০০ মিমি বা তার বেশি বৃষ্টি হলে তাকে ক্লাউডবার্স্ট বলা হয়। সাধারণত এমন দুর্যোগ অরোগ্রাফিক লিফট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে, যেখানে আর্দ্র বায়ু হঠাৎ করে পাহাড়ের কারণে ওপরে উঠে গিয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড বৃষ্টি নামে।
ক্লাউডবার্স্টের ফলে আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস, ঘরবাড়ি ধ্বংস, রাস্তা এবং বিদ্যুৎ-জল-যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। অতীতে ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয়েও ক্লাউডবার্স্ট বড় ভূমিকা রেখেছিল, যেখানে ৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ি অঞ্চলে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার করা, বর্ষাকালে সঠিকভাবে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকা, এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। না হলে প্রতি বছরই এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি ঘটতে থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল