রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

সব যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকরের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করুন। আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি, আর নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সব রায় কার্যকরে তার সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের একটির রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাকি রায়ও একের পর এক কার্যকর করা হবে। আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় যাকে দিয়েই ফোন করান না কেন কোনো লাভ নেই।
গতকাল বিকালে বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের নবনির্মিত অডিটোরিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিরোধী দলের আন্দোলনের সহিংসতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের পুড়িয়ে মানুষ হত্যা একাত্তরের বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। জামায়াতকে নিয়ে ঘর করেন তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে নৈরাজ্য কীভাবে দমন করতে হয় তা আমাদের জানা আছে। 
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জামায়াত ছাড়া নির্বাচনে আসতে চান না, না আসুন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে নিরীহ যাত্রীদের পুড়িয়ে মারবেন, ধ্বংসযজ্ঞ চালাবেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা দিতে দেবেন না। মা-মেয়েকে একসঙ্গে পুড়িয়ে হত্যা করবেন। আমরা বসে বসে দেখব আর সব কিছু সহ্য করব তা হবে না। আন্দোলনের নামে আপনাদের সহিংসতার কীভাবে জবাব দিতে হয়, দমন করতে হয়- তা আমাদের ভালো করেই জানা আছে। একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, সেই যুদ্ধে কীভাবে বিজয়ী হতে হয় তাও দেশের জনগণ জানেন। একাত্তরের মতো এ যুদ্ধেও দেশের জনগণই বিজয়ী হবে। 
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের একক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, সর্বদলীয় সরকারে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই এটা হয়েছে। বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে এলে তাদের সঙ্গেও এমন সমঝোতা করতাম। বিএনপি নেত্রীকে আমি ডেকেছিলাম সমঝোতার জন্য। তিনি সাড়া দেননি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি সমঝোতার জন্য। আমি তাকে (খালেদা জিয়া) ফোনও দিয়েছি। সর্বদলীয় সরকারে আসার প্রস্তাব দিয়েছি। বলেছি, তারা যে মন্ত্রণালয় চাইবে তা-ই দেওয়া হবে। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী সমঝোতার আহ্বানে সাড়া দেননি। যখনই সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছি তিনি উল্টো থ্রেট ও আলটিমেটাম দিয়ে সমঝোতার পরিবেশ নষ্ট করেছেন।
জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না, তাই বিএনপিও নির্বাচনে আসছে না- এমন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট যাকে অবৈধ বলেছে তা নিয়ে টানাটানি করে লাভ নেই।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিনের ছেলে শাহীন রেজা নুর, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ড. আবদুর রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাবলু, সুজিত রায় নন্দী, এস এম কামাল প্রমুখ। ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল সভা পরিচালনা করেন। 
আমির হোসেন আমু বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই একটি রাজনৈতিক দল '৭১-র মতো নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। তাদের নারকীয় তাণ্ডব একাত্তরের গণহত্যাকে মনে করিয়ে দেয়। তারা দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। 
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। বিএনপি নেত্রী আসলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর একটি রাষ্ট্র বানাতে চান।
শাহীন রেজা নুর দীর্ঘদিন পর বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার করায় শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে মাথানত করলে প্রধানমন্ত্রীও মাথা নিচু করেন। 
সৈয়দ আশরাফ : এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবকিছুই সম্ভব। অনেকে বলেছিল এ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করবে না। অথচ কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে। শেখ হাসিনা যে কথা দেন, তা রক্ষা করেন। এটা শুরু। আশা করি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, রায়ও কার্যকর করা হবে। রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গতকাল সৈয়দ আশরাফ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। যারা বিদেশে পালিয়ে আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর পরে একে একে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এর আগে সকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

সর্বশেষ খবর