রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঈদে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয়

আলী আজম

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় তৈরি করা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয়। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গড়া এই বলয়। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার ও র‌্যাব মহাপরিচালকের বিশেষ নির্দেশনা পৌঁছে গেছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়।

নেওয়া হয়েছে বাড়তি নজরদারিও। থাকবে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ ইত্যাদি মেটাল ডিটেকটর, ভেহিক্যাল স্ক্যানার দিয়ে ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তল্লাশি করা হবে। থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয়। রাজধানীতে পুলিশের আটটি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনাররা এবং র‌্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়করা নিজ নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির তদারকি করবেন। পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবেন।

ঢাকা মহানগরীর সবকটি প্রবেশ ও বহির্গমন পথে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এই নিরাপত্তা বলবৎ থাকবে। পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র বলছে, কূটনৈতিক ও মতিঝিল ব্যাংক পাড়ায় বাড়তি নজরদারি থাকছে। গুলশান ও বারিধারার সব দূতাবাস এবং সংলগ্ন সড়কে থাকছে বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি। তবে ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। জাতীয় ঈদগাহ ও এর চারপাশে সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হবে।

জাতীয় ঈদগাহে জায়নামাজ ও ছাতা ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে আনতে মুসল্লিদের নিষেধ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জাতীয় ঈদগাহে কয়েকটি স্তর ভেদ করে মুসল্লিদের আসতে হবে। প্রতিটি চেকপোস্টে নিরাপত্তা আর্চওয়ে এবং পুলিশ চৌকি থাকবে। একই সঙ্গে ডগ স্কোয়াড, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত, মোটরসাইকেলে টহল, ফুট পেট্রোল, অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক চেকপোস্ট ও তল্লাশি চৌকি থাকছে রাজধানীজুড়ে।

ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরতে পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

এ ছাড়া ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতে বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার জুয়েলারি মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ফোর্স থাকবে। সাদা পোশাকেও নজরদারি থাকবে বিনোদন কেন্দ্রে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে চেকপোস্ট, পেট্রল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পিকআপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে টহল থাকবে। ঈদের জামাত, বিনোদন কেন্দ্রসহ ভেন্যুকেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঈদে যারা বাড়িতে যাবে তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।

ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা ও ঈদের পর ঢাকায় ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নির্বিঘœ করতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টহল ও চেকপোস্ট থাকবে। অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নগরবাসীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

ঈদের জামাতে জায়নামাজ ও ছাতা ছাড়া কিছু আনা যাবে না : আসন্ন ঈদুল আজহায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত জামাতে মুসল্লিরা জায়নামাজ ও বৃষ্টি হলে ছাতা সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন। তবে এর বাইরে কোনো কিছু সঙ্গে নিয়ে আসা যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মুসল্লিদের জায়নামাজ ও ছাতা তল্লাশির পর সেগুলো নিয়ে ঈদগাহে প্রবেশের অনুমতি দেবে। গতকাল সকালে জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের প্রধান ঈদের জামাত জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। এ ছাড়াও বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের জামাতকে ঘিরে সুদৃঢ়, সুসমন্বিত ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশ, সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ, সোয়াত, সিটিটিসি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, আর্চওয়ে ও সিসিটিভি মনিটরিং ব্যবস্থা থাকবে।

প্রত্যেক মুসল্লিকে মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ে দিয়ে ঈদগাহে প্রবেশ করতে হবে। এ ছাড়া পুরো এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, যা পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি করা হবে। অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি থাকবে ফায়ার টেন্ডার, মেডিকেল টিম, কমান্ড ভেহিক্যাল ও ওয়াচ টাওয়ার। মুসল্লিরা জায়নামাজ ও ছাতা ছাড়া কোনো ধরনের ব্যাগ, অস্ত্র, ছুরি, চাকু, কাঁচি, গোলাবারুদ ও দাহ্য পদার্থ সঙ্গে রাখতে পারবেন না।

ডিএমপি প্রধান বলেন, ঈদ জামাতে প্রবেশে মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে আবদুল গণি রোড, দোয়েল চত্বর, মৎস্যভবন মোড়সহ কয়েকটি স্থানে ব্যারিকেড থাকবে। এসব রাস্তা দিয়ে ঈদগাহের দিকে পায়ে হেঁটে আসতে হবে। এই ব্যারিকেডের ভিতর ভিভিআইপি ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না।

যে সব মুসল্লি গাড়ি নিয়ে আসবেন তাদের ট্রাফিক কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে পার্কিং করতে হবে। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ, আইইবি’র ভিতরে পার্কিং, কার্পেট গলি, দোয়েল চত্বর ব্যারিকেডের বাইরে, ফজলুল হক হল ব্যারিকেডের বাহিরে এবং প্রেস ক্লাব লিংক রোড ব্যারিকেডের বাইরে গাড়ি পার্কি করা যাবে।

 

সর্বশেষ খবর