শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ফ্রান্স ও জার্মানিতে ফের লকডাউন

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছায় ১১ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৬ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছায় প্রায় সাড়ে চার কোটি। এদিকে ভাইরাসে দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হওয়ায় ফ্রান্স জুড়ে এরই মধ্যে লকডাউন জারি করা হয়েছে, আর জার্মানিতে লকডাউন শুরু হচ্ছে আগামী ২ নভেম্বর থেকে। সূত্র : রয়টার্স ও বিবিসি।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ফের দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ লকডাউন অন্ততপক্ষে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ সময় শুধু জরুরি পণ্য ক্রয়, এক ঘণ্টার জন্য ব্যায়াম করতে ও চিকিৎসার প্রয়োজনে লোকজনকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। বাড়ির বাইরে আসা প্রত্যেককে বিশেষ ডকুমেন্ট বহন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কারণ পুলিশ এগুলো খতিয়ে দেখতে পারে। তিনি আরও বলেন, জরুরি নয় এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যেমন রেস্তোরাঁ ও বার, বন্ধ থাকবে; কিন্তু স্কুল ও কারখানা খোলাই থাকবে। তিনি বলেন, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছে এবং এটি প্রথমটি থেকে আরও কঠিন হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, এপ্রিলের পর থেকে ফ্রান্সে কভিড-১৯ এ এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার দেশটি পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত ও ৫২৩ জনের মৃর্ত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে। মার্চ-এপ্রিলে ফ্রান্স আট সপ্তাহের জন্য লকডাউনে ছিল। ওই সময় কভিড-১৯ মহামারীতে মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ছিল। তখন মহামারী নিয়ন্ত্রণে লকডাউন কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু ১১ মে থেকে বিধিনিষেধ শিথিলের পর সংক্রমণ ফের ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়। এখন মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলো ফের রোগীতে উপচে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। এদিকে ফ্রান্সের প্রতিবেশী জার্মানিও জরুরিভিত্তিতে লকডাউন জারি করার ঘোষণা দিয়েছে। ২ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এ লকডাউন ফ্রান্সের মতো কঠোর না হলেও জার্মানিতে রেস্তোরাঁ, বার, জিম, নাট্যশালা, সিনেমা ও সুইমিংপুল বন্ধ থাকবে। খবরে বলা হয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে জার্মানিতে।

এমতাবস্থায় ফেডারেল ও সব রাজ্য সরকার নতুন সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বুধবার চার ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ও রাজ্যপ্রধানরা আগামী ২ নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী লকডাউনসহ বেশ কিছু কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যার মধ্যে ২ নভেম্বর থেকে পুরা মাসব্যাপী রেস্তোরাঁ-বার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফিটনেস স্টুডিও, সুইমিং পুল বন্ধ থাকবে মাসব্যাপী। বিনোদন কেন্দ্র এবং সব ইভেন্ট পুরো জার্মানিজুড়েই নিষিদ্ধ থাকছে নভেম্বর মাসে। তবে রেস্তোরাঁ, বার, থিয়েটার বন্ধ থাকলেও আপাতত খোলা থাকছে স্কুল। চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল সংবাদ সমেলনে বলেন, আমাদের সম্মিলিতভাবে কঠোর চেষ্টা করতে হবে, যেন যে কোনো উপায়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা যায়। তিনি আরও বলেন, নতুন সংক্রমণের সংখ্যা প্রথমে স্থিতিশীল রাখতে হবে এবং তারপর আরও কমাতে হবে। তবেই তা স্বাস্থ্যব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ছাড়াও জনগণকে অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন চ্যান্সেলর মেরকেল। দেশটিতে এখন প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক মানুষ কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন। মঙ্গলবার জার্মানিতে এক দিনে ১৪ হাজার ৯৬৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, যা এখন পর্যন্ত দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের রেকর্ড। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিও কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। জার্মানিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ৩ লাখ ৩৩ হাজার আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় সাড়ে ১০ হাজার জন।

ইংল্যান্ডে ভাইরাসের সংস্পর্শে দৈনিক ‘এক লাখ লোক’ : ইংল্যান্ডে প্রতিদিনই প্রায় এক লাখ মানুষ নতুন করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসছে বলে এক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ওই গবেষণা বলছে, কভিড-১৯ মহামারীর গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং এখন প্রতি ৯ দিনেই আনুমানিক দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে। গবেষকরা একে ‘সংকটকালীন পর্যায়’ অভিহিত করে এর গতিমুখ ‘অবশ্যই বদলাতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ফ্রান্স ও জার্মানি এরই মধ্যে ফের লকডাউনের জারির ঘোষণা দিলেও যুক্তরাজ্য সরকার ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অঞ্চলভিত্তিক আলাদা আলাদা ব্যবস্থাপনার ওপরই ভরসা রাখছে বলে জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বসন্তে সংক্রমণের সর্বোচ্চ মাত্রা দেখার পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে কভিড-১৯ পরিস্থিতি কেমন, সে সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য থাকায় ‘রিয়েক্ট ১’ নামের এই গবেষণাটি ‘ব্যাপক প্রভাব রাখতে সক্ষম’ বলেই মনে করা হচ্ছে। এতে ৮৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিয়েছেন, সর্বশেষ নমুনা (সোয়াব) নেওয়া হয়েছে রবিবার। গবেষণায় দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে এখন প্রতিটি এলাকায় এবং প্রতিটি বয়সভিত্তিক গ্রুপে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। উত্তরের এলাকাগুলোতে এখন সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হলেও দক্ষিণেও সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এই গবেষণায় ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত নেওয়া সোয়াবের সঙ্গে ১৬ থেকে ২৫ অক্টোবর নেওয়া সোয়াবের তুলনা করা হয়। এতে আগেরবারের তুলনায় পরেরবার দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইংল্যান্ডে এখন প্রতি ৭৮ জনে একজনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইয়র্কশায়ার অ্যান্ড দ্য হাম্বারের। সেখানে প্রতি ৩৭ জনের মধ্যে একজন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরপর ভাইরাসের দাপট সবচেয়ে বেশি ইংল্যান্ডের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে। প্রথমবার নেওয়া সোয়াবের সঙ্গে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নেওয়া সোয়াবের তুলনা করে ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার তিনগুণ এবং ৬৫-ঊর্ধ্বদের দ্বিগুণ বেড়ে গেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ‘রিয়েক্ট ১’ গবেষণায় প্রতিদিন ইংল্যান্ডের ৯৬ হাজার মানুষ প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসছেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। গবেষকদের অন্যতম অধ্যাপক স্টিভেন রিলে বলেছেন, তথ্য আসা শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি ‘অত্যন্ত হতাশ’ হয়ে পড়েন। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এখন যেসব বিধিনিষেধ আছে, তা যে যথেষ্ট নয়, গবেষণার তথ্যই তা বলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর