রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানিতে তেঁতুলিয়া

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানিতে তেঁতুলিয়া

হিমালয়কন্যা খ্যাত দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এখন প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভ্রমণ করছেন। তেঁতুলিয়ার অপরূপ সবুজ প্রকৃতি আর কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াবী দৃশ্য দেখে তারা খুশি। কিন্তু এখানে ঘুরতে এসে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারিভাবে এই এলাকাকে এখনো পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেনি সরকার। অথচ স্থানীয়দের পর্যটন নগরী হিসেবে ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। তারা বলছেন, তেঁতুলিয়াকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুললে এ এলাকার আর্থ-সামজিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করবে। তাই তারা চান শিগগিরই এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করুক সরকার। পর্যটকরা বলছেন, তেঁতুলিয়া একটি গ্রিন ভিলেজের মতো। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। অনেক গাছপালা। নানা ধরনের পাখি। সকাল-সন্ধ্যায় হাজারো পাখির কলতান স্বর্গীয় সুরের মতো কানে বাজে। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ চা-বাগান। গ্রামীণ বাড়িগুলোর আঙিনাজুড়ে দৃশ্যমান চা-বাগানগুলো মুগ্ধ করে। তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয়ের দূরত্ব খুবই কম। হিমালয়ের আঁচল তেঁতুলিয়া। এখান থেকে সকালের চা খেতে খেতে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছেন। তেঁতুলিয়ায়  স্বল্প প্রস্থের নদীগুলো নিঃসন্দেহে মুগ্ধ করবে পর্যটককে। মহানন্দা, করতোয়া, ডাহুক, বেরং, ভেরসা, তিরনই, রণচ-ী, গোবরা নদী বয়ে গেছে মহাসড়কের পাশ  দিয়ে। নদীগুলো থেকে পাথর উত্তোলনের দৃশ্য অন্য রকম। এই উপজেলাতেই গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ছয় কিমি। দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৭৭ কিমি। নেপালের দূরত্ব ৫৮ কিমি। আর ভুটানের দূরত্ব মাত্র ৭৬ কিমি। চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। করোনা সংকটের কারণে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে গমনাগমন বন্ধ আছে। চালু থাকলে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই বন্দরের ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে আশপাশের দেশগুলো ভ্রমণ করেন। এসব পর্যটককে তেঁতুলিয়ার ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয়।

তেঁতুলিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক পরিমন্ডলও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। লোকনাটক, পালাটিয়া এবং সত্যপীর সারা দেশে সমাদৃত। প্রায় ৩০০ বছর আগের পুরনো মন্দির রয়েছে কয়েকটি।

তেঁতুলিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই উপজেলায় পর্যটকরা বেড়াতে আসেন। দেশের শেষ প্রান্ত হওয়ায় তারা শৌখিন অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

কিন্তু এখানে এসে নানা সংকটের মুখোমুখি হতে হয় তাদের। বিশেষ করে আবাসন স্বল্পতার কারণে অনেক পর্যটককে তেঁতুলিয়া থেকে ৫০ কিমি দূরে পঞ্চগড় শহর কিংবা পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে রাতযাপন করতে হয়। পরিবহন ব্যবস্থাও খুব ভালো নয়। ভালো মানের খাবারের হোটেল নেই। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন অধ্যাপক সপরিবারে তেঁতুলিয়ায় এসে থাকার জায়গা না পেয়ে পঞ্চগড়ে রাতযাপন করেন। তিনি বলেন, অসাধারণ এলাকা তেঁতুলিয়া। এখানকার সবুজ সৌন্দর্য পর্যটকদের মোহময়তা দেয়। কিন্তু আবাসন সংকট এখানে প্রকট।

স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, তেঁতুলিয়ায় পর্যটনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ আসেন। গ্রিন তেঁতুলিয়া ক্লিন তেঁতুলিয়া নামের একটি সামাজিক সংগঠনের আহ্বায়ক কাজী মতি জানান, এই উপজেলার নদীগুলোকে পর্যটনের উপাদান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। তাই এ এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা জরুরি। তাহলে এখানকার সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেকারত্ব কমবে। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করবে।

তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটনের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু জানান, তেঁতুলিয়া শহরটিকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শহরের চারপাশে ওয়াকওয়ে, সুইমিং পুল, মুক্তমঞ্চসহ গ্রহণ করা হয়েছে নানা পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য শিগগিরই কাজ শুরু হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এখানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা কমিউনিটি ট্যুরিজমের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পর্যটকদের যাতে থাকা-খাওয়ার কষ্ট না হয় তাই এ উদ্যোগ। এলাকাবাসী তাদের অতিরিক্ত থাকার ঘরগুলো পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য ছেড়ে দেবেন। তারা মেহমান হিসেবে পর্যটকদের খাবারের ব্যবস্থা করবেন। অচিরেই আমরা এলাকাবাসীকে নিয়ে সেমিনার করে এ উদ্যোগ সফল করব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর