বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ-তুরস্ক

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার উদীয়মান সূর্য : তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ-তুরস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাৎ করেন -পিআইডি

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা আরও বাড়াতে চায় তুরস্ক এবং এ সংক্রান্ত প্রযুক্তি ও যৌথ উৎপাদনের জন্য তৈরি আঙ্কারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বড় বড় বিভিন্ন প্রকল্পেও কাজ করতে আগ্রহী তুরস্ক। পাশাপাশি বাংলাদেশও তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্য, কভিড-১৯, বহুপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। গতকাল বাংলাদেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব আগ্রহ জানানো হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসা তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। পরে বিকালে বারিধারায় নতুন দূতাবাস উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই  দিনের সফর শেষ করে তিনি সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার উদীয়মান সূর্য। আর সব দেশের জন্য বাংলাদেশ আজ মডেল। এশিয়া আর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষাসহ নানা খাতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ আছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তুরস্কের অনেক বড় কোম্পানি শুধু টেক্সটাইল নয়, অন্যান্য খাতেও বর্তমানে বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহী। আমরাও তুরস্কের কোম্পানিগুলোকে এ দেশে আসতে উৎসাহ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি নিকট ভবিষ্যতে আমাদের বাণিজ্য ২০০ কোটি ডলার হবে, যা গত বছর প্রায় ১০০ কোটি ডলার ছিল। বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তুরস্কের কনস্ট্রাকশন কোম্পানিগুলো পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম এবং চীনের পরই তুরস্কের অবস্থান। এ খাতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিরক্ষা পণ্যের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো, দাম অত্যন্ত সুলভ এবং এগুলো কেনার জন্য কোনো শর্ত আরোপ করা হয় না। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ এই সুবিধাগুলোর সুযোগ নেবে। প্রতিরক্ষা খাতে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ উৎপাদনে তুরস্ক রাজি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবকিছু তৈরি করি না। তবে ৭৫ শতাংশের বেশি আমরা উৎপাদন করি। এর কারণ হচ্ছে এর আগে যখন সমস্যা চলছিল তখন আমাদের বন্ধুরাও আমাদের প্রতিরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেনি। সেজন্য আমরা বেশিরভাগ পণ্য নিজেরাই উৎপাদন করি। এ খাতে তুরস্ক অনেক বিনিয়োগ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েকটি দেশের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে পণ্য উৎপাদন করছি। রোহিঙ্গা বিষয়ে তুরস্ক বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে যথেষ্ট করছে না। আমরা শুধু কথা শুনতে চাই না। আমরা কাজেও তার প্রতিফলন দেখতে চাই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা তুরস্কের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তুরস্কের সম্পৃক্ততার প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর : জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তুরস্কের সম্পৃক্ততা আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের বলেন,  সাক্ষাতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তুরস্ককে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আরও বেশি তার্কিশ বিনিয়োগ আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বিশাল আঞ্চলিক বাজার এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থানের কারণে বিশাল মার্কেট রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করলে উভয়ই লাভবান হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে তুরস্কের আগ্রহের কথা জানিয়ে সফররত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে মূল্য দেয়। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু করার তার দেশ সেটা করবে। জ্বালানি থেকে পর্যটন সব সেক্টরেই তুরস্ক বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে বলে জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দরের ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ মেরামত করে দেওয়ায় তুরস্ককে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার্কিশ প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাস মার্চে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বাংলাদেশ সফর করতে পারেন বলে জানান সফররত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি করোনা মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তুর্কি মন্ত্রী। সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর