সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বড় ক্ষতির মুখে উন্নয়নশীল দেশ

মানিক মুনতাসির

বড় ক্ষতির মুখে উন্নয়নশীল দেশ

অর্ধশতাব্দীর সবচেয়ে পড়তি সময় পার করছে বিশ্ব অর্থনীতি। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি সংকুচিত হবে অন্তত দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৭০ সাল থেকে মন্দা-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের পর বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে মন্থর অবস্থায় রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থাৎ ১৯৭০ সালের পর বৈশ্বিক অর্থনীতি এতটা ধাক্কার সম্মুখীন হয়নি। আগামী বছর যার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ব। আসছে বছরের সম্ভাব্য ওই অর্থনৈতিক মন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো। এর মধ্যে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘বিশ্বে কি মন্দা আসন্ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। ওই প্রতিবেদনেই এসব আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মন্দা পরিস্থিতি যে আসবে এটা আরও আগে থেকেই সংকেত দিচ্ছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এটাকে ত্বরান্বিত করেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই মন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো সংকটে সবার আগে বিপদে পড়ে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো। তবে যাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো, আমদানি ব্যয় কম, সেসব দেশ কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

এতে বলা হয়, সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এই বছর সুদের হার বাড়িয়েছে, যা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। এমন একটি প্রবণতা আগামী বছর পর্যন্ত ভালোভাবে চলতে পারে। অবশ্য বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো সুদের হার বাড়ায়নি। এমনকি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের মতো দেশের প্রেক্ষাপটে সুদের হার বাড়িয়ে সংকট সামলানো সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে সুদের হার বাড়ালে উল্টো  উদ্যোক্তাদের খরচ বাড়বে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। এমনিতেই দেশের বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে। এ জন্য এ মুুহূর্তে সুদের হার বাড়াতে চায় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদন বলছে, বিনিয়োগকারীরা আশা করে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মুদ্রানীতির হার প্রায় ৪ শতাংশে উন্নীত করবে। এতে তাদের ২০২১ সালের গড়ের তুলনায় ২ শতাংশের বেশি পয়েন্ট বৃদ্ধি পাবে। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হারও বৃদ্ধির ধারণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আর্থিক বাজারব্যবস্থার চাপের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.৫ শতাংশে ধীর হয়ে যাবে। কিছুদিন ধরে ক্রমাগতভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে মন্থর হচ্ছে। আরও বেশি দেশ মন্দার মধ্যে পড়ার কারণে আরও মন্থর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সামনে যে পরিস্থিতি আসছে তা উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এ জন্য টেকসই বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানমুখী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে বিশ্বব্যাংক। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে, যা দারিদ্র্যবিমোচনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন ডেভিড ম্যালপাস।

বিশ্বব্যাংকের ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, বৈশ্বিক ভোক্তা আস্থা ইতোমধ্যে আগের বৈশ্বিক মন্দার তুলনায় অনেক বেশি তীব্রভাবে পতনের সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম অর্থনীতি- যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরো অঞ্চল তীব্রভাবে মন্থর হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, এমনকি পরের বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি মাঝারি আঘাত এটিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে উন্নয়নশীল দেশগুলো। সামনের দিনে আসন্ন এই সংকটের সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে মূল্যস্ফীতিকে। বিশ্বের প্রায় সব দেশই বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হতে চলেছে।

এদিকে আজ তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার। বিশ্বব্যাপী অর্থলগ্নিকারী সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের বাংলাদেশে এটি প্রথম সফর। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কাল। এতে বলা হয়, তিন দিনের সফরে রাইজার বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি খাতের নেতা, সুশীল সমাজ ও থিঙ্কট্যাঙ্কারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এ সময় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের করণীয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে পরামর্শ দেবেন রাইজার।

সর্বশেষ খবর