সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রতারণার টাকায় ঢাকায় বাড়ি গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্য কোনো পেশা নেই। প্রতারণার টাকায় ঢাকায় গড়েছেন বাড়ি-গাড়ি। তাদের টার্গেটে প্রথম পছন্দ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। তাদের নানা কৌশলে ফাঁদে ফেলে হাতিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। কখনো বা অবসর জীবনে আকর্ষণীয় চাকরি আবার কখনো বা ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রলোভন। রাজধানীতে তিন-চারটি অফিস।         

টার্গেট পূরণের পরই অফিস বদল। এই চক্রের সদস্যরা কয়েক দফা গ্রেফতারও হয়েছিল। জামিনে বের হয়ে আবার নতুন কৌশলে প্রতারণার জাল বিছায়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগের সদস্যরা এই চক্রের চার সদস্যকে মোহাম্মদপুর ও কলাবাগান এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতাররা হলো,  হায়দার আলী (৬৪), রেজাউল করিম (৩৭), নাসির উদ্দিন (৪৯) ও আবদুল কাদের (৫৬)। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২০ লাখ ৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ গতকাল বিকালে এক সংবাদ  সম্মেলনে বলেন, চলতি মাসের ৯ অক্টোবর অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রতারক চক্রের এক সদস্য ফোন করে নিজেকে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ড রিসাইক্লিং পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দেয়। কথাবার্তার একপর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে তাদের প্রজেক্টে কনসালট্যান্ট পদে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে ১০ অক্টোবর প্রতারকদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী, মিরপুর মডেল থানার মধ্য পীরেরবাগে একটি অফিসে গ্রেফতার হায়দার আলীর সঙ্গে কনসালট্যান্ট পদে নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। চক্রের এক সদস্য নিজেকে ইমপোর্টারের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেয়। সে চক্রের অন্য সদস্যদের জানায়, তার একজন ভারতীয় বস ১৬ কোটি টাকার চশমা, হাতঘড়ি, ক্যামেরা ক্রয় করবে। ওই চশমা, হাতঘড়ি, ক্যামেরা ইমপোর্ট করে ভারতীয় বসকে সরবরাহ করলে ৩০ শতাংশ লাভ হবে। ওই পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখাতে হবে, যার জন্য ৭৫ লাখ টাকা লাগবে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা তখন ওই অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে ব্যবসায় শেয়ারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। ভুক্তভোগী প্রথমে রাজি না হলেও প্রতারকদের প্রলোভনের কারণে ওই ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী হন। পরে গত ১৯ অক্টোবর তিনি প্রতারকদের কথা মতো ৫ লাখ টাকা দেন। পরে প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানায়, নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখানো হয়েছে এবং নমুনা তার পছন্দ হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর ভুক্তভোগী প্রতারকদের অফিসে যান এবং দেখতে পান ভারতীয় বস তাদের ৩০ শতাংশ অগ্রিম বাবদ ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন।

প্রতারকরা ভুক্তভোগীকে জানায়, তারা ইমপোর্টারকে ৩০ শতাংশ টাকা পরিশোধ না করলে মালামাল দেবে না। এ জন্য প্রতারকরা ভিকটিমকে আরও ৫০ লাখ টাকা দিতে বলেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ডিবি মিরপুর বিভাগকে অবহিত করেন। পরে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। ডিবি প্রধান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই গ্রেফতাররা জানিয়েছে, অনেকটা একইভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে প্রতারণা করে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। এই চক্রের মধ্যে একজনের সাভারে একটি এবং ঢাকায় দুটি বাড়ি রয়েছে এবং চক্রের আরেক সদস্যের রয়েছে গাড়ির ব্যবসা। তাদের নামে রাজধানীসহ সারা দেশে আরও ১০টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় প্রতারণা মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর