বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মশার দাপটে অতিষ্ঠ নগরী

তাপমাত্রা ভূমিকা রাখছে এডিস মশা জন্মাতে

হাসান ইমন

মশার দাপটে অতিষ্ঠ নগরী

ঢাকায় কোনো মৌসুমেই মশার দাপট কমে না। বর্ষার পর শরৎ, হেমন্ত পেরিয়ে চলছে শীত মৌসুম। এখনো রাজধানীজুড়ে এডিস মশার আধিপত্য রয়েছে। প্রতিদিনই শত শত মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে কিউলেক্স মশার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সব মিলিয়ে ঘরে-বাইরে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রাণঘাতী মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কার্যক্রম করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। তবে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার বাড়ছে বলে জানান কীটতত্ত্ববিদরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ২০১৯ সালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল ডেঙ্গু, সেবার মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জন। এবার বছর পেরোনোর আগেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৭ জনে। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬০ হাজার। গতকালও এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১৮৪ জন।

বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকার মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে না। এ কারণে কাক্সিক্ষত সাফল্য মিলছে না। বছরব্যাপী পরিকল্পনা অনুযায়ী যে ধরনের কাজ করা দরকার, এখানে সেসব হচ্ছে না। নেই পর্যাপ্ত বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ জনবলও। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকলে কর্তারা এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করেন না। আর যখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায় তখন নড়েচড়ে বসেন। মানুষের মন ভোলানোর জন্য দৃশ্যমান কিছু কাজ করেন, যা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না।

এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার বক্সকালভার্ট ও কাভার্ড ড্রেন রয়েছে। যেগুলোতে দুই সিটি মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। পাশাপাশি প্লাস্টিক দ্রব্যসামগ্রী, পলিথিন, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনায় ওই ড্রেনগুলোতে ভরাট থাকে। দুই ভবনের মাঝখানের জায়গাগুলো আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যে কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। এসব স্থানের জমাটবাঁধা পানিতে কিউলেক্স মশা বংশ বিস্তার করছে। মশার প্রজনন কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়াও জলাশয়, খাল ও নর্দমায় মশার বংশ বিস্তার ঘটছে।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে বাংলাদেশে মশার প্রজনন ঘটছে। দেশে এখনো ২৫-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বিদ্যমান। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি না থাকলেও বিভিন্ন ছোট-বড় পাত্রে পানি থাকছে। বড় বড় স্থাপনাগুলোর নিচ তলায় পার্কিংয়ে বিভিন্ন স্থানে পানি পাওয়া যায়। সেখানেও এডিস মশার বংশ বিস্তার আমরা দেখছি। আর নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে অনেক দিন ধরে ভবন নির্মাণাধীন থাকছে। এ ছাড়া পানি সংকটের কারণে অনেকে বালতি ভরে পানি জমা রাখছে। সেখানেও এডিস মশার বংশবিস্তার আমরা পাচ্ছি। এখন থেকে বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকবে। তবে এই মৌসুমে কিছুটা কমতে পারে। সমাধান হিসেবে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন কাজ করছে। তবে এই কাজটা আরও আন্তরিকতার  সঙ্গে বছরজুড়ে করতে হবে। পাশাপাশি সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণের সব ধরনের টুলস ব্যবহার করা হবে। আর শীত বর্ষা সব সময় মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখছি। কীটপতঙ্গের বা এডিস মশার বিবর্তনের পরিবর্তন দেখছি এবং সময়সীমার পরিবর্তন দেখছি। এ সম্পর্কে আমাদের পূর্বাভাস পাওয়া প্রয়োজন। এবার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব অক্টোবর ছাড়িয়ে এখনো চলছে। এতদিন এডিস মশার প্রাদুর্ভাব থাকার কথা ছিল না। এখন আমরা শুষ্ক মৌসুমে চলে এসেছি। কিন্তু তারপরও আমরা এডিস মশার বিস্তার লক্ষ্য করছি। ফলে এডিস মশা নিধনের জন্য, নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের কাজ চলমান রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মৌসুমের পরও এডিস এবং মৌসুমের আগে কিউলেক্স মশার বিস্তার হওয়ার কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের আরও কার্যকর গবেষণা প্রয়োজন এবং এ ধরনের গবেষণায় সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, শুধু কিউলেক্স মশা নয়। এডিস মশাও এখনো রয়েছে। আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম ও অভিযান চলছে। দুই ভবনের মাঝখানে খালি জায়গায় অনেকে ময়লা ফেলে। এখানে মশা বংশবিস্তার ঘটায়। এই মশা বিস্তারে নাগরিককে আরও সচেতন হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর