সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সৌদিতে ২৪ নারী উদ্ধারের ঘটনায় মামলা

বিএমইটির বৈঠকে অংশ নিলেও আসামিকে পাচ্ছে না পুলিশ

সাখাওয়াত কাওসার

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ২৪ জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীকে উদ্ধারের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, রাজধানীর কাকরাইলে বিএমইটি ভবনে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিলেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। তবে গত ২৩ জানুয়ারি সৌদি ফেরত আলেয়া বেগম (ছদ্মনাম) বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।

গত ২৮ ডিসেম্বর আলেয়াসহ ১৬ জন ভুক্তভোগী বাংলাদেশে ফেরেন। জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হওয়া ২৪ জনের মধ্যে ১৬ জনকে প্রথম দফায় সৌদিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ফেরত পাঠানো হয়। ১৬ জনের একজন আলেয়া। গত ২৫ অক্টোবর সৌদির আরআর শহর থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ২৪ জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীকে উদ্ধারের বিষয়টি জানানো হয়। এর আগে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর ভুক্তভোগী হনুফা বেগমের (ছদ্মনাম) স্বামী প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালককে ১৬ জন ভিকটিমের বিষয়টি অবহিত করে সহায়তা চান।

মামলার বিষয়ে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দীন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করছেন এসআই মেহেদী হাসান। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি আসামিকে গ্রেফতারের জন্য।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কাকরাইলে বিএমইটি অফিসে আড়াইটা থেকে শুরু হওয়া একটি বৈঠকে মামলার প্রধান আসামি এস আনোয়ার ওভারসিজের মালিক এস আনোয়ার (৫৫) নিজেই উপস্থিত ছিলেন। সেদিন কনফারেন্স কক্ষে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পল্টন থানা থেকে  ৫০০ মিটারের মধ্যে বিএমইটি অফিস হলেও আনোয়ারকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে আসামি আনোয়ারের সেলফোনে কয়েক দফা কল করা হলেও একপর্যায়ে তিনি বন্ধ করে দেন। এর আগে মামলার বাদী ভিকটিম আলেয়া খাতুনের (ছদ্মনাম) সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, সৌদিতে টানা ১৭ মাস আমাকে কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। উল্টো করা হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। মাঝে-মাঝেই নির্যাতনের পর বাথরুমে আটকিয়ে রাখা হতো।

কথা বলার একপর্যায়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন তিনি। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে তিনি বলেন, গৃহকর্তরা বলেছে আমাকে ৪-৫ লাখ টাকা দিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর টাকা কীসের? সবশেষ শরীর ভীষণ রকম অসুস্থ হয়ে পড়লে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের অফিসে পৌঁছে দেয় তারা। দেশে ফিরে আসার পর কয়েকবার আনোয়ার সাহেবকে ফোন করেছিলাম। তিনি উল্টো আমাকে শাসিয়েছেন। এরপর তিনি আর ফোন ধরছেন না।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের স্থানীয় দালাল আবুবক্করের মাধ্যমে এস আনোয়ারের সঙ্গে পরিচিত হন ভুক্তভোগী আলেয়া। পরে ২০২১ সালের ১৬ জুলাই আলেয়াসহ ২৩ জনকে একত্রে সৌদি পাঠায় দালাল চক্র। সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি মাকতাব তাওয়াসুল আলসারি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এস আনোয়ার ওভারসিজের মাধ্যমে তাদের সৌদি আরবে নেওয়া হয়। তাদের নিয়োগ কর্তাদের বাসায় না পাঠিয়ে বেআইনিভাবে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয় এবং পরিবারের সঙ্গে তাদের সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয়ের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদের কোনো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর